রুবেল রানা, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিতে ৩৩ লাখ টাকার জমি বিক্রি দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ টাকা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযানের অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমম্বিত জেলা কার্যালয় ঠাকুরগাঁওয়ের সহকারী পরিচালক আজমির শরীফ মারজীর নেতৃত্বে একটি দল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী হাটে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ৩৩ লাখ টাকার বায়নানামা রেজিস্ট্রি দলিল করে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে ১৬ লাখ টাকায়। যার ফলে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আজমির শরীফ মারজী জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি, নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি ও ঘুষ দাবিসহ নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান পরিচালনাকালে অফিসে বায়নানামা দলিল ও কবলা দলিল সম্পাদনে বেশ কিছু অনিয়ম আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে পরিলক্ষিত হয় এবং নথিপত্রগুলো সংগ্রহ হয়। নকল পেতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে সেবাগ্রহীতারা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন এবং অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। প্রথমে ৩৩ লাখ বায়নানামা দলিল করে পরে ২৮ লাখ টাকা একই দলিল যখন রেজিস্ট্রি করা হয় তখন ১৬ লাখ টাকা মূল্য দেখানো হয়। যা সরকারকে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, সেবা গ্রহণ কার্যক্রম হয়রানি মুক্ত করার লক্ষ্যে অফিসের প্রধান ফটকের সামনে সরকারি ফি সংক্রান্ত তালিকা টাঙানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা কিছু রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছি। পরবর্তীতে কমিশনার বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠানো হবে। দুদকের এমন অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা। সেই সঙ্গে এমন অভিযান নিয়মিত পরিচালনার দাবি তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক জানান, নতুন সাব-রেজিস্ট্রার আসার পর থেকে আমাদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে গেছে। এই সাব-রেজিস্ট্রার মোটা অংকের ঘুষ ছাড়া বণ্টননামা এবং অছিয়তনামার দলিল স্বাক্ষর করেন না।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী এলাকার মাজেদ বলেন, এই অফিসগুলোতে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। টাকা দিলে কাজ হয়, না হলে ওইভাবে থেকে যায়। দুদক যদি এমন অভিযান সপ্তাহে একবার করে পরিচালনা করে তাহলে আমরা সবাই উপকৃত হবো। খোকন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে দলিলের যে মূল্য নির্ধারণ করা থাকে তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। খরচ অনুযায়ী টাকার ভাউচারও সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। তাই অফিসগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা উচিত।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মনিশা রায় মুঠোফোনে বলেন, আমি ছুটিতে থাকায় কিছু বলতে পারছি না। তবে দুদক যে দলিলের বিষয়ে অভিযোগ করেছে সেই দলিলগুলো খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।