মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টর: বগুড়ার আদমদীঘিতে শিক্ষা কার্যক্রমে তদারকি ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠা সেই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তৌফিক আজিজকে বদলি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খালিদ হোসেনের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মাধ্যমে তথ্যটি পাওয়া যায়। তাকে আদমদীঘি থেকে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাতে একই পদে স্থানান্তর করা হয়েছে।
জানা যায়, আদমদীঘিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে শিক্ষা কার্যক্রমে তদারকি ও দায়িত্বের প্রতি অবহেলা সহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ফেব্রুয়ারী ২০, ২১ ও ২২ তারিখে একাধিক শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক, অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি আমলে নেন। পরে গত মঙ্গলবার (৪মার্চ) সন্ধ্যায় তাকে লিখিতভাবে বদলি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন তৌফিক আজিজ। কাজের সুবাদে ওই সময়ের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু এবং তার সহধর্মিণী আইপিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জু আরা বেগমের সঙ্গে পরিচিত হোন। এক সময় তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর তাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম করেন।
অভিযোগ উঠেছে, সান্তাহার ইউপির উৎরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হবার পরও দুই ঘন্টাব্যাপী সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর সঙ্গে মুঠোফোনে গোপন আলাপ করেন। পরে তার পছন্দের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এরশাদুল হক টুলুকে সভাপতি ঘোষণা করেন। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের মাধ্যমে যে কয়েকটা সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে প্রত্যেকটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাম রাখা হয়। সকল কাজে তাদের সহযোগীতা করে আসছিলেন তিনি। আওয়ামী সরকার পতন হলেও এই আওয়ামীপন্থী শিক্ষা অফিসার দীর্ঘ ৮ বছর ধরে একই জায়গায় বহাল তবিয়তে আছেন। এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। অথচ চাকুরিজীবীদের সর্বোচ্চ একই স্থানে ৩ বছরের বেশি রাখেনা সরকার।
এদিকে তার শিক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব ছিলো চরম অবহেলা। নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের কথা থাকলেও নিকটবর্তী হাতেগোনা কয়েকটি বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান তিনি। বাঁকি বিভিন্ন ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়ে তার পায়ের ধুলো পড়েনা। এমন অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। ইভটিজিং ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দের সাথে আলোচনাসভা করা কথা থাকলেও তা আদৌও করা হয়না। দিনের পর দিন ছাতিয়ানগ্রাম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কু্লের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানো হলেও তার কোন বাঁধা ছিলোনা। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করতেন তিনি।
অফিসও করতেন অনিয়মিত। শুধু তাই নয় জাতীয় প্রোগ্রামগুলোতে তার যে দায়িত্ব সেটিও সঠিকভাবে পানল না করে অসহযোগী মনোভাব প্রকাশ করতেন। উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্বরতদের সঙ্গে তার সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে।
দিনের পর দিন এভাবে চলে তার নিজের বৈষম্য আচরণ। তার ঔদ্বত্যপুর্ণ আচারণে অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী। সম্প্রতি আইপিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জু আরা বেগম আওয়ামী সরকারের পতনের পর দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা সত্বেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে দায়িত্বহীনতার অভাবে শিক্ষার মান ক্রমশ কমতে থাকবে। ফলে পিছিয়ে পড়বে আদমদীঘি শিক্ষা ব্যবস্থা।