জামাল উদ্দিন, চিরিরবন্দও,দিনাজপুর প্রতিনিধি: এভাবে মাঠে ইঁদুরের গর্ত খুঁজছেন পিতা-পুত্র। ইঁদুরের গর্ত খুঁজে পেলেই শুরু করছেন খোঁড়াখুঁড়ি। সেই গর্তের ভেতর ইঁদুরের রাখা ধানের শীষ খুঁজে বের করে আনছেন। এ ধান সিদ্ধ করে চাল বানিয়ে ভাত রান্না করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খাবেন তারা। এর সাথে পালন করবেন নবান্ন উৎসব। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার খামার সাতনালা রফিকুল ভাটা সংলগ্ন চিনিবাস ডাঙ্গা নামক স্থানে গিয়ে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধানের শীষ বের করে আনা পিতা-পুত্র দু’জনের দেখা মেলে। তাদের বাড়ি উপজেলা খামার সাতনালা গ্রামে। সকালে তারা দুমুঠো ভাত খেয়েই জীবিকার অন্বেষণে এই চিনিবাস ডাঙ্গা মাঠে এসেছেন।
শীত উপেক্ষা করে হিম শীতল বাতাসের মধ্যেই সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলবে তাদের ধানের শীষ সংগ্রহের কাজ। তাদের হাতে খোন্তা, কোদাল, বাইশ ও বস্তা দেখা গেছে। ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করতে আসা একরামুল হক (৪৪) দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, আমি ভাটায় কাজ করি। এখন পর্যন্ত ভাটায় তেমন কাজ শুরু হয়নি। আর প্রতি আমন মৌসুমে আমি খেত-খামার থেকে ধানের শীষ সংগ্রহ করি। তবে বছরের অন্য সময় রিক্সাও চালাই। সব গর্ত খুঁড়ে ধান পাওয়া যায় না। কোনো কোনো গর্তে ভালো ধান পাওয়া যায়। আবার কোনো গর্তে কিছুই পাওয়া যায় না।
তবে এ কাজ করতে সাপের ভয়ও আছে। কারণ ইঁদুরের গর্তের মধ্যে অনেক সময় আবার সাপ থাকে। তারপরও পেটের দায়ে জীবন বাজি রেখে আমাদের এই কাজ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, কষ্ট হলেও আমি এই কাজ করে প্রতিদিন ১৫-২০ কেজি ধান জোগাড় করতে পারি। আবার বেশিও হয়। কথা হয় চিনিবাস ডাঙ্গা মাঠের কৃষক বাবলু রায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, আমন মৌসুমে সাধারণত ইঁদুর বেশি করে পাকা ধানের শীষ কেটে গর্তে নিয়ে যায়।
এ সময়টাতে মাঠে ইঁদুরের উপদ্রব বেশি হয়ে থাকে। শুধু ইঁদুরের গর্ত থেকেই নয়, ধান কাটার পর খেতে ধানের যে সব শীষগুলো পড়ে থাকে, সেগুলোও এই নারী-পুরুষরা কুড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে আমরা তাদের কিছু বলি না। এ বিষয়ে আলোকডিহি জান বকস্ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নন্দন কুমার দাস মুক্ত কলম বলেন, মূলত দারিদ্র্যের কারণেই পেটের জ্বালায় এসব নারী-পুরুষ ও শিশুরা খেত-খামার থেকে ধান সংগ্রহ করেন। তবে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধানের শীষ সংগ্রহ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অনেক সময় ইঁদুরের গর্তে সাপ থাকতে পারে। আর এতে যে কারও জীবন মৃত্যুর মুখেও পড়তে পারে।