সম্পাদকীয়ঃ কুরবানীর প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানুন, সঠিক ভাবে কুরবানী আদায় করুন।

উদ্দেশ্যেঃ মনে রাখতে হবে কুরবানী কার জন্য করছেন, নিয়ত পরিস্কার রাখতে হবে, কুরবানীর গোস্ত অবশ্যই তিন ভাগে ভাগ করতে হবে, একভাগ গরীব দুখিদের মাঝে বিলিয়ে দিবেন, আর একভাগ পাড়াপর্শিদের মাঝে বিলিয়ে দিবেন, আর এক ভাগ আপনার পরিবারের জন্য। কিন্তু আজ কাল দেখা যায় অধিকাংশ মানুষের কুরবানী হয় না তারা কুরবানী করে নিজেকে জাহির করার জন্য। মহান রাব্বুল আল-আমিনের সন্তুষ্টির জন্য না। আসুন আগে নিজের ভিতরের পশুকে কুরবানী করি, তাহলেই আল্লাহ্‌ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের করতে পারবো।

কুরবানী শব্দের অর্থ হলোঃ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন জিনিস উৎসর্গ করা। কুরআনুল কারীমের একাধিক স্থানে কুরবানী শব্দটি উক্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- إذ قربا قربانا فتقبل من أحدهما ولم بتقبل من الآخر তখন তারা উভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হলো এবং অপর জনের উৎসর্গ গৃহীত হয় নি। এছাড়া ও সূরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে এবং সুরা আহকবের ২৮ নং আয়াতে উক্ত অর্থে কুরবানী শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

কুরবানীর ইতিহাস ও তাৎপর্যঃ কুরবানী শব্দের অর্থ হলো; আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন জিনিস উৎসর্গ করা। কুরআনুল কারীমের একাধিক স্থানে কুরবানী শব্দটি উক্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

إذ قربا قربانا فتقبل من أحدهما ولم بتقبل من الآخر

তখন তারা উভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হলো এবং অপর জনের উৎসর্গ গৃহীত হয় নি। এছাড়া ও সূরা মায়েদার ২৭ নং আয়াতে এবং সুরা আহকবের ২৮ নং আয়াতে উক্ত অর্থে কুরবানী শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

কুরবানীর সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ কুরবানীর এ ধারা বহু আগে থেকেই মানুষের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। হযরত আদম আলাইহিস সালামের দু’সন্তানের মাঝে কোন একটি বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে উভয়েই আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ করেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ

আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’।
(সূরা মায়েদার আয়াত নং ২৭)

উক্ত আয়াতের তাফসীরে মুফাসিরীনগন লিখেছেন; আদম আলাইহিস সালামের দুই সন্তান হাবিল ও কাবীল কোরবানির জন্য সিদ্ধান্ত নেয় ।হাবিল একটি সুষ্ঠ সবল দুম্বা কুরবানী করল আর কাবিল যেহেতু শস্য উৎপাদন করত তাই সে তার উৎপাদিত ফসল‌ থেকে কিছু অংশ কোরবানির উদ্দেশ্যে পেশ করেছিল। হাবিলের কুরবানী আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হয়েছিল তাই আলামত হিসাবে আসমানী আগুন এসে ভষ্ম করে দিয়েছিল । কিন্তু কাবিলের কুরবানী কবুল না হওয়ায় তা তার আপনস্থানেই পড়ে ছিল । এ বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন

إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ

যখন তারা উভয়েই কুরবানী পেশ করল তখন আল্লাহ তাআলা তাদের একজনের কুরবানী কবুল করলেন,অন্যজনের কুরবানী কবুল করা হলো না ।আর আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র মুত্তাকিনদের থেকেই কবুল করেন।
(সূরা মায়েদা আয়াত নং ২৭)

অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের ঐতিহাসিক ঘটনার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে কুরবানীর দাওয়াত পৌঁছে দিলেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের কুরবানীর বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে-

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَابُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَاأَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ (102

فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ (103

وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَاإِبْرَاهِيمُ (104

قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ (105

إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ (106

وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ (107

অতঃপর সে পুত্র (ইসমাইল আলাইহিস সালাম ) যখন পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের সাথে চলাফেরা করার উপযুক্ত হলো, তখন সে বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবেহ করেছি। এবার চিন্তা করে বল, তোমার অভিমত কী ? পুত্র বলল আব্বাজী ! আপনাকে যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ্, আপনি আমাকে সবরকারীদের একজন পাবেন। সুতরাং (তা ছিল এক বিষ্ময়কর দৃশ্য) যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং পিতা পুত্রকে কাত করে (জবেহ করার উদ্দেশ্যে) শুইয়ে দিলেন, আর আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম; হে ইব্রাহিম! তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। নিশ্চয়ই আমি সৎকর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিলো এক স্পষ্ট পরীক্ষা। এবং আমি এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে সে শিশুকে মুক্ত করলাম।
(সূরা আস-সাফফাত আয়াত নং ১০২-১০৭)

সংক্ষিপ্ত ব্যখ্যাঃ (পিতা – পুত্র উভয়ে তো নিজেদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন প্রসঙ্গে এটাই ধরে নিয়েছিলেন যে, পিতা পুত্রকে যবেহ করবেন। তাই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামকে যবেহ করার উদ্দেশ্যে কাত করে জমিনে শোয়ালেন। পিতা পুত্র উভয়ে যেহেতু আল্লাহ্ তায়ালার আদেশ পালনের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী সব কিছুই করে ফেলে ছিলেন, তাই তারা উক্ত পরীক্ষায় পরিপূর্ণভাবে সফল হয়েছেন অনন্তর আল্লাহ তাআলা তার কুদরতের এক কারিশমা দেখালেন। ছুরি হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের গলায় না চলে তার স্থলে একটি দুম্বার গলায় চলল। আল্লাহ তাআলা সেটিকে নিজ কুদরতে সেখানে পাঠিয়ে দেন। আর হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে জীবিত ও নিরাপদ রাখলেন।)

জেনে রাখাঃ ( এখানে যে তিনদিন স্বপ্নে দেখে তিনদিন ১০০ উট জবেহ করার কথা এবং জবেহ করার সময় ইসমাইল আলাইহিস সালামের চোখ, হাত, পা বাঁধার ব্যপারে যে সকল চমকপ্রদ তথ্য বলা হয়, সে সকল তথ্য পবিত্র কুরআনুল কারীম ও প্রমানযোগ্য কোন হাদিসে তা বর্ণিত হয় নি। তাই আমরা সেগুলো উল্লেখ করা থেকে বিরত থেকেছি । আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সহীহভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন।)

আর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি উক্ত বিধান কে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সুন্নাত বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং নিজের জীবদ্দশায় আমলের মাধ্যমে এবং সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী উম্মতকে উক্ত বিধান পালন করতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে তা পৃথিবীর এক অবিচ্ছেদ্য বিধান হিসাবে স্বীকৃত হয়ে থাকল ।

ُحَمَّدُ بْنُ خَلَفٍ الْعَسْقَلاَنِيُّ، حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا سَلاَّمُ بْنُ مِسْكِينٍ، حَدَّثَنَا عَائِذُ اللَّهِ، عَنْ أَبِي دَاوُدَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ ‏”‏ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَةٌ ‏”‏ ‏.‏

যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত (ঐতিয্য)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে পুণ্য হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৭, সুনানে তিরমিযী হাদিস নং১৪৯৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৬)

অবগত করণঃ
কুরবানীর মূল বিষয় (অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন কিছু উৎসর্গ করা) শুরু থেকেই চলে আসছে । তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না।

*অন্যান্য উম্মতের থেকে এ উম্মতের কুরবানীর আরো বড় একটি পার্থক্য হলোঃ অন্যান্য উম্মত কুরবানীকৃত পশুর গোশত নিজেরা বা অন্য কোন মানুষ খাওয়ার বিধান ছিল না বরং কুরবানী করে কোন জায়গায় রেখে আসত অতঃপর যে কুরবানী কবুল হবে তাকে আসমানী অগ্নি এসে ভষ্ম করে দিয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতের জন্য সে বিধান রাখেন নি । বরং এই উম্মতের জন্য কুরবানীর পশুর গোশত এবং খাওয়ার উপযোগী জিনিসগুলো বৈধ করেছেন । এমনকি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবানে উক্ত গোশত খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে ইরশাদ হয়েছে

ﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ، ﻋﻦ اﻟﻨﺒﻲ – ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗﺎﻝ: ﺇﺫا ﺿﺤﻰ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻠﻴﺄﻛﻞ ﻣﻦ ﺃﺿﺤﻴﺘﻪ
ﺭﻭاﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ اﻟﺼﺤﻴﺢ

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোরবানী দেয় সে ও যেন তার কোরবানি থেকে খায় ।
(মাজমায়ুজ জাওয়ায়েদ হাদিস নং ৫৯৯০, ৫৯৯১)

কুরবানীর উদ্দেশ্যঃ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সম্পদ দান করেছেন এবং মানুষকে সম্পদ ব্যয় করার জন্য বিশেষ কিছু খাত ও বলে দিয়েছেন । যেখানে নিসাবের মালিকদের জন্য ব্যয় করা আবশ্যক করেছেন।যেমন যাকাত , সদকাতুল ফিতর, কোরবানি ইত্যাদি। যেহেতু সম্পদ মূলত আল্লাহর-ই দান বা অনুগ্রহ। তাই তিনি কোন বিধান আরোপ করলে হাসিমুখে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে উক্ত ইবাদত পালন করা আমাদের দায়িত্ব।আর কুরবানী এমন একটি ইবাদত তার সকল ফায়েদাই বান্দা ভোগ করে আল্লাহ তাআলা শুধু মাত্র বান্দার তাকওয়া দেখেন । পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ

আল্লাহর কাছে ওগুলোর না গোশত পৌঁছে, আর না রক্ত পৌঁছে বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পার এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, কাজেই সৎকর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।
(সূরা হজ্ব ৩৭)

কুরবানীর গুরুত্বঃ কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সমর্থবান নর-নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব। এটি মৌলিক ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তে মুহাম্মাদির কোরবানী মিল্লাতে ইব্রাহীমীর সুন্নাত । সেখান থেকেই এসেছে এই কুরবানী। এটি ইসলামের শিয়ার বা ইসলামের প্রতীকি বিধানাবলীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তা পালনে ইসলামের প্রতীকের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এছাড়া ও এই কুরবানীর মাধ্যমে গরীব-দুঃখী ও পাড়া প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহ ও রাসূলের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে কুরবানীতে । পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার জন্য ত্যাগ ও বিসর্জনের সবক ও আছে এতে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন;

فصل لربك وانحر

অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানী করুন।
(সূরা কাউসার ০২)

অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেনঃ

قل ان صلاتي و نسكي و محياى و مماتى لله رب العالمين

(হে রাসূল আপনি বলেন) , আমার নামাজ আমার কুরবানী, আমার জীবন আমার মরন
(অর্থাৎ আমার সবকিছু ই রাব্বুল আলামীনের জন্য উৎসর্গিত।
(সূরা আনআম ১৬২)

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

ِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ ضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَوْمَ عِيدٍ بِكَبْشَيْنِ فَقَالَ حِينَ وَجَّهَهُمَا ‏ “‏ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ ‏”‏ ‏.‏

জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন দু’টি মেষ যবেহ করেন। তিনি পশু দু’টিকে কিব্লামুখী করে বলেন; “ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল-আরদা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াকা ও মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা আন মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহি।”

“আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই” (সূরা আনআমঃ ৭৯)
“বলো, আমার নামায, আমার ইবাদত (কুরবানী), আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নাই এবং আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম”

(সূরা আনআমঃ ১৬২-৩)
হে আল্লাহ! তোমার নিকট থেকেই প্রাপ্ত এবং তোমার জন্যই উৎসর্গিত। অতএব তা মুহাম্মাদ ও তাঁর উম্মাতের পক্ষ থেকে কবুল করো”। (তিরমিযী ১৫২১, আবূ দাউদ ২৭৯৫, ২৮১০, আহমাদ ১৪৪২৩, ১৪৪৭৭, ১৪৬০৪, সুনানে দারেমী ১৯৪৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২১)

কোরবানির ফজিলত ও সাওয়াবঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نَافِعٍ، حَدَّثَنِي أَبُو الْمُثَنَّى، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ “‏ مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلاً أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ وَإِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَظْلاَفِهَا وَأَشْعَارِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا ‏”‏ ‏.‏

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোরবানির দিন আদম সন্তান এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা মহামহিম আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত (কোরবানি) করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কোরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই (কোরবানি) মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দ সহকারে কোরবানি করো।

অপর এক হাদীসে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَلَفٍ الْعَسْقَلاَنِيُّ، حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا سَلاَّمُ بْنُ مِسْكِينٍ، حَدَّثَنَا عَائِذُ اللَّهِ، عَنْ أَبِي دَاوُدَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ ‏”‏ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَةٌ ‏”‏ ‏.‏

যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত (ঐতিয্য)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে পুণ্য হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৭, সুনানে তিরমিযী হাদিস নং১৪৯৩,সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৬)

এসকল ফজিলত বর্ণিত হওয়ার পরও যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করবে না, তাকে গুরুত্ব না দেওয়ার ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;

، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ “‏ مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلا يَقْرَبَنَّ مُصَلانَا ‏”‏‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও যেন না আসে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)

উল্লেখিত হাদিসে মূলত তাকে ঈদগাহে যাওয়া থেকে নিষেধ করা উদ্দেশ্য নয় বরং তাকে গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বোঝানো উদ্দেশ্য। যাতে করে সে তা জেনে হলেও কুরবানী আদায় করে। আল্লাহ তায়ালা সকলকে সহীহভাবে দ্বীন বোঝার তাওফিক দান করেন। এবং কুরবানী করতে সক্ষম ব্যক্তিদেরকে কুরবানী করার জন্য তাওফিক দান করেন।

ঈদ উল আজহা বা কোরবানির দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ

ইসলামী আদব-কায়দা মেনে চলা এবং হাদিসে বর্ণিত সুন্নতের অনুসরণ করা যেমন-

এক.
গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সর্বোত্তম কাপড় পরা- এগুলো সুন্নত।

দুই.
ক. ঈদের সালাত ওয়াজিব। তাই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করবে।
খ. মসজিদের বাইরে উন্মুক্ত ময়দানে ঈদের জামাত করা সুন্নত। তাই বিভিন্ন মসজিদের পরিচালক মিলিত হয়ে ঈদগাহ বা খোলা ময়দানে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করে একটি সুন্নতের ওপর আমল করার পরিবেশ তৈরি করবেন।
গ. ঈদগাহে এক পথে যাওয়া অন্য পথে ফিরে আসা সুন্নত।
ঘ. যাওয়া ও আসার পথে তাকবির বলা সুন্নত।
ঙ. ঈদের জামাত শেষে খুতবা শোনা ওয়াজিব।

তিন.
ভালো আমলের প্রতি আগ্রহী হওয়া, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজখবর নেয়া ও কুশল বিনিময় করা।

চার.
কোরবানিকৃত পশুর গোশত দিয়ে ইফতার করা। তাই ঈদের সালাত আদায় শেষে তার জন্য অপেক্ষা করা। অবশ্য এটা কেউ এককভাবে কোরবানি করলে তার জন্য সহজ। অংশীদারিত্বে দিলেও এটা অসম্ভব নয়। প্রথমেই কিছু গোশত অংশীদারেরা ভাগ করে নিলে এ আমল করা অসম্ভব নয়।

পাঁচ.
এ দিনের সবচেয়ে বড় আমল হলো কোরবানির পশু জবাই করা। এ জন্য রয়েছে কয়েকটি বিধান কোরবানি হবে ঈদের জামাত শেষে। এর আগে কোরবানির পশু জবাই করলে তা কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, ‘এ দিনের সর্বপ্রথম যে কাজটি আমরা করব তা হলো আমরা (ঈদের) সালাত আদায় করব; এরপর আমরা ফিরে এসে পশু জবাই করব। যে এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নতপ্রাপ্ত হলো। আর যে সালাত আদায়ের আগেই জবাই করল তাহলে তা জবাইকৃত প্রাণীর গোশতে পরিণত হলো, যা সে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবস্থা করল’ (বুখারি : সহি)।

ছয়.
পরস্পরে দেখা হলে এ বলে মুবারকবাদ দেয়া ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না- ওয়া মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (আমল) কবুল করুন)। রাশিদ ইবন সা’দ বর্ণনা করেন যে, একবার এক ঈদের দিন ওয়াছিলা ইবন আসকা এবং আবু উমামা বাহিলী রা: তার সাথে দেখা করেন এবং বলেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়া মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (আমল) কবুল করুন) (তাবরানি : আদ দু’আ)। অন্য এক বর্ণনায় খালিদ ইবন মা’দান বর্ণনা করেন যে, একবার এক ঈদের দিন আমি ওয়াছিলা ইবন আসকার সাথে দেখা করি এবং বলি ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়া মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের আমল কবুল করুন)। তখন তিনি বলেন, হ্যাঁ, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়া মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের আমল কবুল করুন) (বায়হাকি : আস সুনানুল কুবরা)। অন্য এক বর্ণনায় উমার ইবন আবদুল আজিজের মাওলা আদহাম বর্ণনা করেন যে, ঈদের দিন আমরা উমার ইবন আবদুল ‘আজিজকে এ বলে মুবারকবাদ দিতাম ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়া মিনকা ইয়া আমিরাল মুমিনিন’ ( হে আমিরুল মুমিনিন! আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (আমল) কবুল করুন)। তখন তিনিও আমাদের উত্তর দিতেন এবং এ ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করতেন। (বায়হাকি : শু’আবুল ঈমান)।

কোরবানির হুকুমঃ যাদের ওপর জাকাত ফরজ তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। তা ছাড়া ঈদের দিন সুবিহ সাদিকের সময় যারা নিসাব পরিমাণ উদ্বৃত্ত সম্পদের মালিক হবেন তাদের ওপরও কোরবানি ওয়াজিব। এ জন্য বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরি নয়। অন্যান্য ইমামের মতে সামর্থ্যবান সব মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হাদিসে বর্ণিত যে, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে’ (ইবন মাজাহ : সুনান)। ইমাম আহমাদ বলেন, সামর্থ্যবান ব্যক্তির কোরবানি না করাকে আমি অপছন্দ করি। ইমাম মালিক ও শাফেয়িও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেন।

কোরবানির ফজিলত ও এর সওয়াবঃ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কোরবানির দিন আদম সন্তান যে আমল করে তার মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কোরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করা। কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, নাড়িভুঁড়ি ও চুল-পশম নিয়ে উপস্থিত হবে। আর তার রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব তোমরা আনন্দের সাথে তা পালন করো’ (ইবন মাজাহ : সুনান)। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে যে, ‘রাসূলুল্লাহ সা: কে কোরবানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, এটা হলো তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আ:-এর সুন্নত। তারা বললেন, এর বিনিময়ে আমাদের জন্য কী রয়েছে? তিনি সা: বললেন, প্রতিটি চুলের জন্য রয়েছে একটি করে নেকি। তারা বলল, তাহলে পশমের কী হবে? তিনি বললেন, চুলের প্রতিটি পশমের জন্যও রয়েছে একটি করে নেকি’ (ইবন মাজাহ : সুনান ও আহমাদ : মুসনাদ)।

কোরবানি করাঃ

ক. নিজের কোরবানির পশু নিজে জবাই করা সুন্নত।
খ. অংশীদারিত্বের কোরবানি অংশীদারদের মধ্যে আগ্রহী যে কেউ একজন করা উত্তম। তবে উভয়েে ত্র অনুমতিপ্রাপ্ত অন্য কেউ পে করলেও কোরবানি হয়ে যাবে।
গ. কোরবানিকারীকে সম্মানী দেয়া বৈধ। তবে দুঃখজনক হলো, কোরবানির পশু ক্রয় করেন হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে, কিন্তু সম্মানী প্রদানেরেে ত্র এত কৃপণতা করে যে লজ্জা পেতে হয়।

গোশত বণ্টনঃ কোরবানির গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন যে, এটা তিন ভাগ করা সুন্নত এবং নিজ পরিবারে গোশত রাখার প্রয়োজন সত্ত্বেও এ বিশ্বাসে অনেকেই তাই করে থাকেন।
আসলে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। তিন ভাগে বণ্টন করা মুস্তাহাব বলা হয়েছে। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং এক ভাগ গরিব দুস্থদের জন্য।
তবে কোনো পরিবারে যদি সদস্যসংখ্যা বেশি থাকে তাহলে কম বেশি করা যেতে পারে। এমনকি পরবর্তী সময়ের জন্য সংরক্ষণও করা যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জাবির ইবন আবদুল্লাহ বর্ণিত একটি হাদিসে দেখা যায়, নবীজি সা: তিন দিনের পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (অর্থাৎ তিন দিনের পর যেন গোশত অবশিষ্ট না থাকে।) অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা খাও, সাদাকা (বিলি) করো ও সংরণ করো।’ (মালিক : মুয়াত্তা)। পরের বছর সাহাবিরা বললেন, গত বছরের মতো এ বছরও কি তিন দিনের বেশি গোশত রাখা যাবে না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রাখা যাবে। গত বছর দুর্ভি ছিল, তাই নিষেধ করা হয়েছে।

অন্য এক হাদিসে দেখা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে তিনটি বিষয় নিষেধ করেছিলাম, এখন আমি সে তিনটি বিষয় সম্পর্কে তোমাদের অনুমতি দিচ্ছি : তোমাদেরকে কবর জিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পারো। কারণ কবর জিয়ারতে রয়েছে (আখেরাতের) স্মরণ ও উপদেশ। তোমাদেরকে চামড়াজাত পাত্রে পান করা থেকে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যেকোনো পাত্রে পান করতে পারো। তবে নেশাজাতীয় পানীয় পান করবে না। তোমাদেরকে তিন দিনের পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা (তিন দিনের পরও) খেতে পারো এবং সফরেও তা থেকে উপকৃত হতে পারো’ (বায়হাকি : আস্সুনানুল কুবরা)।

আবু সাঈদ খুদরি থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হে মদিনাবাসী! তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত খেও না’ (সংরক্ষণ করো না)। তারা রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে অভিযোগ করলেন যে, আমাদের সন্তান, সেবক-সেবিকা ও সাহায্যকারী রয়েছে। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা খাও, খাওয়াও ও সংরণ করো’ (প্রাগুক্ত)।

অন্য একটি হাদিস হজরত নাবিশা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমাদেরকে তোমাদের সচ্ছলতা না আসা পর্যন্ত তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত খেতে (সংরক্ষণ) নিষেধ করেছিলাম। আল্লাহ এখন তোমাদের সচ্ছলতা দান করেছেন; অতএব তোমরা খাও, সংরণ করো এবং সাদাকা (বিলি) করো। মনে রেখ, এ দিনগুলো হলো পানাহার ও আল্লাহকে স্মরণ করার দিন’ (প্রাগুক্ত)।

হজরত আয়েশাকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘একবারই মাত্র এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যখন দুর্ভি দেখা দিয়েছিল’ (প্রাগুক্ত)। এ দিকে আল্লাহপাক কুরআন কারিমে ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও’ ( সূরা হাজ : ২৮)। অন্য স্থানে ইরশাদ করেন, (অনুবাদার্থ), ‘তবে তোমরা তা থেকে আহার করো এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও অভাবগ্রস্ত ফকিরকে আহার করাও’ ( সূরা হাজ : ৩৬)।

কোরবানির উদ্দেশ্য কিন্তু গোশত খাওয়া নয়। বরং তাকওয়া প্রদর্শনই হচ্ছে কোরবানির উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন (অনুবাদার্থ), ‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না ওদের (জবাইকৃত কোরবানির পশু) গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া’ ( সূরা হাজ : ৩৭)।

তাই গরিব, মিসকিন, ফকির ও অভাবগ্রস্তদের বাদ দিয়ে কোরবানির আনন্দ পূর্ণতা পেতে পারে না। অনুরূপ কোরবানির আনন্দ ষোলকলায় পূর্ণ হতে পারে না আত্মীয়স্বজনকে বাদ দিয়ে। তাই কোরবানির গোশত সংরণের অনুমতি মানে পুরোটুকু গিলে ফেলা নয়। আবার এর মানে এও নয় যে, পরিবারের সদস্যদের বঞ্চিত করা। এক কথায় বলা যায় কোরবানিদাতাই ঠিক করবেন কতটুকু নিজের জন্য রাখবেন, কতটুকু আত্মীয়স্বজন বা অভাবগ্রস্তদের মাঝে বণ্টন করবেন।

গুনাহ ও পাপাচার থেকে মুক্ত থাকতে হবেঃ ঈদুল ফিতর কি ঈদুল আজহা উভয় ঈদেই দেখা যায় বিনোদনের নাম করে ইলেকট্রনিকস মিডিয়াগুলো এমন কিছু অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে যেগুলো নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারে না। তরুণ-তরুণীদের আঁটসাঁট দৃষ্টিকটু পোশাকে অভিনয় ছোট্ট শিশুদের মনে দাগ কাটে, কিশোর-কিশোরীদের অন্যায় কল্পনায় উদ্বুদ্ধ করে; তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে উৎসাহ জোগায়। পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করার উপযুক্ত পরিবেশ থাকে না। কোরবানির শিক্ষা যেখানে নিজের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা, আত্মনিয়ন্ত্রণ করা, ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হওয়া সেখানে এসব অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে সমাজকে কলুষিত করা হয়। ছেলেমেয়েরা মুঠোফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন অশোভনীয় বাক্য ও অশ্লীল ছবি বিনিময়ের মাধ্যমে নির্মল আনন্দকে পঙ্কিলতায় বদলে দেয়। নৈতিকতায় শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে অনৈতিকতার ভয়ঙ্কর নখরে দংশিত হয়ে ত-বিত হয়ে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ত্যাগের শিা অর্জনের পরিবর্তে মোহ ও লোভের শিকার হয়। অতএব এসব অনুষ্ঠান বর্জন করে নিজের ঈমানী শক্তিকে উজ্জীবিত করতে হবে।

নির্মল আনন্দ, গঠনমূলক ও শিণীয় অনুষ্ঠান নির্মাণ দোষের কিছু নয়, বরং এটা সময়ের দাবি। তাই এ ধরনের অনুষ্ঠানাদি নির্মাণের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ ও কোরবানির শিায় অনুপ্রাণিত হতে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ও প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানসহ বৈচিত্র্যময় সঙ্গীতানুষ্ঠান যেমন হামদ-নাত, গজল ইত্যাদির সমম্বয়ে ‘ঈদ সন্ধ্যা’, ‘গজল সন্ধ্যা’, ‘ত্যাগের মহিমায় কোরবানি’ জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।

আমীন

ফেসবুক মন্তব্য


মতামত জানান :

 
 
 

শিরোনাম :

বগুড়ায় রানার প্লাজা থেকে তালা কাটার যন্ত্রসহ যুবক আটক রাজারহাটে খড়ের পিকআপে মিললো ৩৫কেজি গাঁজা,গ্রেফতার-১ নাট্য সমিতির সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের ৫র্ম দিনে মঞ্চায়িত হলো সংগীতানুষ্ঠান ফরিদপুরে চোরাই গরুসহ দুই চোর আটক সাদ পন্থীদের নিষিদ্ধের দাবীতে ঈদগাঁওতে বিক্ষোভ  পঞ্চগড় দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহের কবলে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে আখ মাড়াই মৌসুম শুরু তথ্য অধিকার বাস্তবায়ন ও পরবীক্ষণ কমিটির সাথে তথ্য কমিশনারে সাথে মতবিনিময় সভা নবাবগঞ্জে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ডোমারে ইপিল গাছ থেকে গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের খসড়া তালিকা প্রকাশ বিএনপি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে পঞ্চগড়ে আদালতে জনবল তোপের মুখে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত নদীতে নিখোঁজ দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার শেরপুরে  বিএনপির মনোভাব কি বদলাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের পাকিস্তান থেকে আমদানি বেড়েছে ২৭%,কমেছে ভারত থেকে আদমদীঘিতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে গাছ কাটার অভিযোগ, প্রশাসন নীরব তেঁতুলিয়ায় শীতবস্ত্র উপহার দিলেন আল খায়ের ফাউন্ডেশনের মালয়েশিয়ায় বড়দিন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবির জ্যাকেট-আইডি কার্ড না দেখিয়ে আসামি ধরছে না বাংলাদেশে ছাত্রদের নতুন দল আসছে, টার্গেট কি ক্ষমতা? পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ায় ৯ কোটি টাকার মাদকসহ যুবক আটক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে ফাঁসি দেওয়া হবে-হামিদুর রহমান আযাদ ট্রাক-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ নিহত-২ ফরিদপুরে বিদেশি পিস্তলসহ দুই সন্ত্রাসী আটক কবিতঃ চির স্বরণীয় কবি নজরুল-লেখক সৈয়দ হারুনুর রশীদ ঠাকুরগাঁও এর বালিয়াডাঙ্গীতে শ্যালকের হাতে দুলাভাই খুন। পাকিস্তান থেকে আলু-পেঁয়াজ ও শিল্পের কাঁচামাল জাহাজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে পারে
Translate Here »