রফিকুল ইসলাম জিলু,ব্যুরো প্রধান ঢাকা: দেশের ইতিহাসে সাভারের রানা প্লাজা ধস একটি বড় ধরনের ট্র্যাজেডি। আজ ২৪ এপ্রিল। ২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়।
অবৈধভাবে কারখানা স্থাপন করা ভবন ধসে পড়ায় নিহত হন এক হাজার ১৩৪ জন। আহত হন আরও দুই হাজারের বেশি। তাদের সবাই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। এ ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে দুটি মামলা হয়। এর কোনোটিরই তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও অন্য মামলায় রয়েছে স্থগিতাদেশ। এ ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও থামেনি স্বজনদের কান্না। আতঙ্ক কাটছে না আহতদের। দীর্ঘ ১২ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি মামলা।
এক যুগ আগে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ৮৪৪টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অশনাক্ত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। উদ্ধারকৃত জীবিতদের মধ্যে ১ হাজার ৫২৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৭৮ জন।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে সাভারে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দিনটিতে ছুটে আসেন নিহতের স্বজন ও আহতরা। এদিকে আজ দিনটি ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
এ ঘটনায় সেই সময় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় একটি মামলা করে রাজউক এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুদক। দীর্ঘ ১২ বছরে চারটি মামলার মধ্যে সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা নিষ্পত্তি হলেও বাকি মামলাগুলো নিষ্পত্তির মুখ দেখছে না।
হত্যা মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষীর মধ্যে ৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে কবে এ মামলার বিচার শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। এছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে ইমারত বিধি না মেনে ভবন তৈরির মামলার কার্যক্রম। স্থগিতাদেশের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও হাকিম আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ আর শুরু হয়নি।
এদিকে রানা প্লাজার ভবন ধসে নিহত পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন হয়নি। এর মধ্যে সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের কিশামত হলদিয়া গ্রামের স্মৃতি রাণীর (২৭) পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। স্মৃতি রাণীর চাকরির টাকায় তাদের সংসার চলত। কিন্তু তার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর ১২ বছরেও তাদের আর কোনো অনুদান দেওয়া হয়নি। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের দিনমজুর ওয়াহেদ আলীর ছেলে সবুজ মিয়া (২০) ভবন ধসের ঘটনায় নিহত হন। তার পরিবারের অবস্থাও একই রকম।
রানা প্লাজা ধসের দিনকে পৃথিবীব্যাপী পালনের দাবি জানিয়ে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন,এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এই ট্র্যাজেডির দায় কেউ নেয়নি, বিচার হয়নি, ক্ষতিপূরণও হয়নি। আমরা চাই, শ্রমিকদের জীবন মানের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৪ এপ্রিলকে সারা পৃথিবীতে যেন রানা প্লাজা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এছাড়া এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার শাস্তি নিশ্চিত করে দ্রুত বিচার শেষ করা।’’ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা, আর এই ঘটনা যেন কোনো দিন ভুলে না যাওয়া একটি শিক্ষা হয়ে থাকে।