মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টার: আজ শনিবার সকাল ৯টা। বগুড়ার সান্তাহার জংশন স্টেশনে তিতুমির আন্তঃনগর ট্রেন থেকে দলে দলে নেমে এলেন মৌসুমি ধান রোপণের শ্রমিকরা। কারও হাতে ব্যাগ, কারও হাতে ধান কাটার সরঞ্জাম। পুরো স্টেশনজুড়ে এখন কয়েকশত শ্রমিকের পদচারণা।
এদের বেশিরভাগই এসেছেন নীলফামারী, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, রংপুরের কাউনিয়া ও গাইবান্ধা অঞ্চল থেকে। প্রতিবছরের মতো এবারও ইরি-বোরো ও আমন মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, জয়পুরহাট অঞ্চলের ধান রোপণের কাজের সন্ধানে ছুটে এসেছেন তারা।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থেকে আসা শ্রমিক কফিল উদ্দিন ডাকঘর নিউজকে বললেন-“হামরা কামলা মানুষ। দিনমজুরির যা আয় হয়, তাই দিয়ে সংসার চলে। এখন এলাকায় কোনো কাজ নাই। নগদ টাকাও নাই। তাই ২১ জন মিলি দল বাঁইধা কাজে বের হয়েছি। দুই-তিন সপ্তাহ কাম করির পাইলে সাত-আট হাজার টাকা লইয়া বাড়ি ফিরিম।
শুধু কফিল নন, এমন বাস্তবতায় বহু শ্রমিক কাজের খোঁজে পাড়ি জমিয়েছেন অজানার পথে। কেউ পরিবারের খরচ চালাতে, কেউবা ঋণ শোধের তাগিদে। আনোয়ার নামে আরেক শ্রমিক ডাকঘর নিউজকে জানান, বাড়িতে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। কাজের সময় দোকান থেকে বাকিতে নিত্যপণ্য নেওয়ার কথা বলে এসেছেন। তার ভাষায়-“বাড়ি ফিরি বাকির টাকা শোধ করিম।
১৩ জনের আরেকদল শ্রমিক সফিক ডাকঘর নিউজকে জানালেন, সান্তাহারের দমদমা গ্রামের কৃষক মোবারকের সঙ্গে মোবাইলে আগেই চুক্তি হয়েছে। তারা মোবারকের বাড়িতে থেকে ধান রোপণের কাজ করবেন। রাতে থাকতে হবে মহাজনের বাড়ি বা স্কুলঘরে।
কৃষক জাহাঙ্গির আলম ডাকঘর নিউজকে বললেন- “দূরত্ব ভেদে ধান রোপণের দর নির্ধারিত হয়। সাধারণত বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকার আশেপাশে মজুরি দিয়ে থাকি। এছাড়া তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থাও করতে হয়।
দমদমা গ্রামের ইউপি সদস্য শিপলু খান ডাকঘর নিউজকে বলেন- “গতবারের মতো এবারও বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। মৌসুমি শ্রমিক না এলে ধান রোপণ কঠিন হয়ে পড়তো। এখানকার কৃষকরা তাই মৌসুমি শ্রমিকদের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করে রাখেন, প্রয়োজন পড়লে ডাক পাঠান।
সান্তাহার নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম ডাকঘর নিউজকে জানান- “সময় পাল্টেছে। অনেক স্থানীয় শ্রমিক এখন রাজমিস্ত্রি, সিএনজি চালকসহ অন্যান্য পেশায় চলে গেছে। এসব পেশায় আয় বেশি, পরিশ্রম কম। তাই ধান কাটার মৌসুমে পুরোপুরি মৌসুমি শ্রমিকের ওপর নির্ভর করতে হয়। না এলে মাঠের ফসল মাঠেই পড়ে থাকত।
সান্তাহার জংশন স্টেশনের মাস্টার খাদিজা খানম ডাকঘর নিউজকে বলেন-“সপ্তাহখানেক ধরে মৌসুমি শ্রমিকদের চাপে ট্রেনগুলোতে ব্যাপক ভিড়। অনেক সময় টিকিট থাকা সত্ত্বেও অনেকে বগিতে উঠতে পারেন না। তখন আমরা টিকিটের টাকা ফেরত দিই বা পরবর্তী ট্রেনে যাওয়ার পরামর্শ দিই।##