আবুল কাশেম,ভোলা প্রতিনিধি: ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ঢাকাস্থ ভোলাবাসী। ভোলায় একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ভোলা জেলার প্রত্যেক ঘরে ঘরে গ্যাস–সংযোগ ও ভোলা-বরিশাল সেতু দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন ভোলার বাসিন্দারা। রোববার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তোপখানা রোডে ‘আগামীর ভোলা’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আগামীর ভোলার মুখপাত্র ও সাংবাদিক মীর মোহাম্মদ। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস মাতব্বর। ভোলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশে মীর মোহাম্মদসহ বক্তারা বলেন, ভোলা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দ্বীপজেলা। এখানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকারে ভোলাবাসী দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক পিছিয়ে। অথচ ভোলায় বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত রয়েছে। ভোলার মানুষ একুশটি জেলার মাছের চাহিদা পূরণ করে। খাদ্য উদ্বৃত্তির ভোলা জেলা পার্শ্ববর্তী তিনটি জেলার ঘাটতি খাদ্য চাহিদা পূরন করে। ভোলা জেলার মানব সম্পদ সারা দেশে মানব সম্পদ আকারে ছড়িয়ে আছে।
ভোলার মানুষ বাংলাদেশের প্রতিটি বিপ্লবের বিজয়ে নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছে। ভোলা জেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের প্রয়োজন। গ্যাস ভিত্তিক শিল্প উন্নয়নের জন্য ভোলা জেলা ভিত্তিক স্থানীয় গ্যাস ব্যবহারের দাবি জানান তিনি। পৃথিবীর সব দেশেই আহরিত খনিজ সম্পদ স্থানীয় চাহিদা পূরন করে অন্যত্র স্থানান্তর হয়। কিন্তু ভোলার খনিজ সম্পদ গ্যাসের বেলায় ভোলার গ্যাসের চলার ও ব্যবহারের পথ উল্টো? ভোলা-বরিশাল ব্রীজের দাবীতে বক্তারা বলেন, ভোলার জন্মের প্রায় তিনশত বছর অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ভোলা জেলার সাথে আদৌ কোন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয় নাই।
প্রতি বছরই নির্বাচনের পূর্বাপর কালে কতেক ব্যক্তি বাংলাদেশের নির্বাচনী আলিশান রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন টিকেট নিয়ে ভোলায় গিয়ে তার রাজনৈতিক দলের বিজয়ের কথা বলে। সরল বিশ্বাসের ভোলাবাসী তাদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে। বিজয়ীরা ঢাকায় এসে সবাই ঠন্ ঠন্ হন্ হন্। কিন্তু ত্রিশ লক্ষ ভোলাবাসীর হৃদয়ের দাবী, প্রাণের দাবী, আত্মার দাবী, চিত্তের দাবী, অধিকারের দাবী ও বেঁচে থাকার দাবী ভোলা-বরিশাল ব্রীজ কেহ-ই নির্মান করে নাই। ভোলা-বরিশাল ব্রীজ না থাকায় ভোলাবাসী চির অবহেলিত হয়ে আছে। জান, মাল, মান, সন্মান ও জীবনের নিরাপত্তা ভোলাবাসী পায় না।
ভোলা জেলার মানুষের পরিবহনের জন্য আছে অসুস্থ রোগীর প্রেসক্রিপশনের ঔষধের ট্যাবলেট সেবনের মত গুটি কতেক সময়ের গুটি কতেক লঞ্চ। যা দিয়ে যে কোন প্রয়োজনের সময় ভোলার মানুষ তার গন্তব্যের জন্য জেলার বাইরে যেতে পারে না। ঐ লঞ্চ টাইম হারিয়ে গেলে ভোলার যে কোন তাৎক্ষনিক অসুস্থ লোক ছটপট করে ভোলার মধ্যেই মরতে হয়। ভোলার লোক অসুস্থ হয়ে লঞ্চ টাইমে লঞ্চে উঠলেও দ্রুত হাসপাতাল গন্তব্যে পৌছতে না পারার কারনেও নদীর মধ্যেই মৃত্যূবরণ করতে বাধ্য হতে হয় ভোলা জেলার মানুষকে। ভোলার স্থানীয় বাসিন্দারা ভোলা জেলা ত্যাগ করে বেশিদিন অন্যত্রও অবস্থান নিতে পারে না। কারন ভোলা জেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী ও প্রকৃতি নির্ভর।
প্রকৃতির সাথে বৈরী হয়ে ভোলার মানুষকে চলতে গেলে ভোলার মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়। তাই ভোলা-বরিশাল ব্রীজ ভোলা জেলার মানুষের এখন নিত্যসঙ্গী— অথচ নাই। তাই অতীব প্রয়োজনীয় ভোলা-বরিশাল ব্রীজের দাবিতে “আগামীর ভোলা” সংগঠনের ব্যানারে সম্মিলিত ভোলাবাসী ঢাকায় মানব বন্ধন করেছে ঢাকাস্থ ভোলাবাসীর মানববন্ধন।