বন্য হাতির ভয়ে ঘুমাতে পারছেন না সীমান্তের মানুষ। ভারতীয় সীমান্তবর্তী শেরপুরের তিনটি উপজেলার ৪০টি গ্রামের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারছেন না বন্য হাতির ভয়ে। শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে গত এক সপ্তাহে হাতির দ্বারা নষ্ট হয়েছে বিশাল এলাকার ফসল। ফলে ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে, ঘণ্টা বাজিয়ে বা মশাল জ্বালিয়ে রাতভর হাতি ঠেকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, ১৯৯৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৭০ জনের।
এই সময়ে শতাধিক আহত ছাড়াও লাখ লাখ টাকার ফসলি জমি নষ্ট হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও তাণ্ডব শুরু হয়েছে, যা হাতি-মানুষের যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বন্য হাতির তাণ্ডব থেকে পাহাড়ি মানুষ ও ফসল রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তাতে সুফল না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে হাতি ঠেকাতে নিজেদের জান-মাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত পার করতে হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ গত এক সপ্তাহ ধরে রাতভর পাহারা দিচ্ছেন।
চলতি মৌসুমের পাকা আমন ধান ও শীতের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে শেরপুরের পাহাড়ি জনপদের এসব গ্রামে। সেখানকার কৃষকের সংসার চলে এই ফসল দিয়ে, যাতে মই দিতে শুরু করেছে বন্য হাতি। এ থেকে রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি স্থানীয়দের। এ বিষয়ে শ্রীবরদীর সিংগাবরুনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু রায়হান বাবুল বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১৭ সালে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় বৈদ্যুতিক তারের বেড়া নির্মাণ করে বন বিভাগ। তদারকির অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেই সোলার ফ্যান্সিং। ফলে বন্য হাতির তাণ্ডব ঠেকানো যাচ্ছে না।
এই সময়ে খাবারের অভাবে বন্য হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে জানিয়ে বন্য প্রাণী গবেষক আদনান আজাদ বলেন, অসাধু মানুষেরা পাহাড় ধ্বংস করে মানববসতি গড়ে তোলায় এই অবস্থা ত্বরান্বিত হয়েছে। বনে মানুষের উপস্থিতি বাড়লে হাতির আক্রমণও বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকায় গিয়ে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানান শেরপুরের জেলা প্রশাসক মমিনুর রশিদ। আগামীতে ক্ষতিগ্রস্তদের একইভাবে সহযোগিতা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।