মিরু হাসান,স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়া জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় আরও এক আওয়ামী লীগ নেতা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে আবদুল মতিন ওরফে মিঠু (৬৫) নামের এই নেতার মৃত্যু হয়।
আবদুল মতিন জেলার গাবতলী উপজেলার বৈঠাভাঙা দক্ষিণ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দুর্গাহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। তিনি দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এ নিয়ে গত ১১ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯ দিনে বগুড়া কারাগারে বন্দী থাকা চারজন আওয়ামী লীগ নেতা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন।
বগুড়া জেলা কারাগার ও পুলিশ সূত্র জানায়, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন মিঠু গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বৈঠাভাঙ্গা গ্রামের মৃত মোজাহার আলীর ছেলে। গত ৪ আগস্ট দুপুরে বগুড়া শহরের ঝাউতলা এলাকায় মিছিল চলাকালে গুলিতে গাবতলী পৌর শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি জিল্লুর রহমান নিহত হন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী খাদিজা বেগম ২৫ অক্টোবর বগুড়া সদর থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে ৫৫৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
আবদুল মতিন মিঠু এ মামলার অন্যতম আসামি। এ ছাড়া জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুরাইয়া জেরিন রনি তার (মিঠু) বিরুদ্ধে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় আসামি করেন।
বগুড়া জেলা কারাগারের জেলার সৈয়দ শাহ শরিফ জানান, আবদুল মতিন মিঠু গত ৩ নভেম্বর গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আসেন। তিনি রোববার রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাকে দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, বগুড়া কারা কতৃপর্ক্ষ রাত ৪টা ২০ মিনিটে আবদুল মতিনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে। রাত ৪টা ৩০ মিনিটে তাকে হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে আটটায় তিনি মারা যান।এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সকালে বগুড়া জেলা কারাগারের শৌচাগারে গোসলের সময় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু (৬০)। চিকিৎসকরা তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। দিনভর চেষ্টা করেও অনুমতি না মেলায় বিকাল ৫টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
পথিমধ্যে অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝুনুকে সিরাজগঞ্জে এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তেনের সুযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে তাকে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর তার বিরুদ্ধে একের পর এক তিনটি হত্যাসহ পাঁচটি মামলা দেওয়া হয়। ডিবি পুলিশ গত ২৫ আগস্ট রাত ১০টার দিকে বগুড়া শহরের মালতিনগর হাইস্কুল সড়কের বাসা থেকে গ্রেফতার করেছিল।
এদিকে দুটি নাশকতার মামলায় গত ১৫ আগস্ট বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফকে (৬৭) গ্রেফতার করা হয়। গত ২৩ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৫ নভেম্বর সকাল ৬টার দিকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ছাড়া গত ৪ অক্টোবর বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার হন, বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রতন (৫৪)। তিনি ১১ নভেম্বর গভীর রাতে বগুড়া কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বগুড়ায় ৪ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কয়েকজন হতাহতের ঘটনায় বেশ কয়েকটি হত্যাসহ বিস্ফোরক ও নাশকতার মামলা হয়। অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের কয়েকজন জেলে হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে বগুড়া জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোস্তাকিম রহমান অন্যতম। কয়েকদিন আগে তাকে ডান্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছিল।
বগুড়া জেলা কারাগারের জেলার সৈয়দ শাহ শরিফ জানান, বর্তমানে কারাগারে অসুস্থ সাত জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে কোনও আওয়ামী লীগ নেতা আছে কি না তা দেখে পরে জানানো যাবে।