মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টারঃ পর্যটন কেন্দ্র ও পাখি পল্লী হিসেবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে শতবছরের ঐতিহ্য রক্তদহ। এই বিলটি দুই উপজেলার সীমানার মধ্যে হলেও নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বিলটির অবস্থান বেশি। এখানে যাতায়াতও করে থাকেন এই উপজেলার মানুষ। আর সেই জন্য বিলটি সৌন্দর্য বর্ধনের দফায় দফায় পরিদর্শন করছেন রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ইতিমধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে দৃশ্যমান কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও মোহাইমেনা শারমীন। প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলে এলাকাটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে আরো শক্তিশালী হবে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জানা যায়, এখন পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী এ উপজেলায় পর্যটনমুখি কোন খাত গড়ে তোলা হয়নি। উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্য হচ্ছে রক্তদহ বিল। এই বিলটি বগুড়া জেলার আদমদীঘি ও নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা এই দুই উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। তবে বিলের সিংহ ভাগই হচ্ছে রাণীনগর উপজেলার অংশে। অপরদিকে রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়কটি নতুন করে নির্মাণ হওয়ায় হাতিরপুল এলাকাটি পর্যটকদের আকর্ষন করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে রক্তদহ বিলের এই অঞ্চলটি যখন পানিতে টই টুম্বর হয়ে যায় তখন এলাকাটি আরো আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নৌকা নিয়ে ভ্রমণের জন্য হাজারো পর্যটকরা এখানে ভীড় করে। আর হরেক রকমের পাখিদের কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো রক্তদহ বিল এলাকা।
জানতে চাইলে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমিন বলেন, হাতিরপুল ব্রিজ থেকে রতনডারার পাশ দিয়ে রক্তদহ বিলের মধ্যে চলাচলকারী মেঠো সড়কটি আধুনিকায়ন, সড়কের দুই পাশে পর্যটকদের জন্য বসার ব্রেঞ্চ নির্মাণসহ আরো নানা রকমের সৌখিন ও আকর্ষনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা এবং সারা বছর রক্তদহ বিলে আশ্রয় নেয়া হরেক রকমের পাখিদের অভয়ারন্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাখি পল্লী হিসেবে এলাকাটিকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পাখিরা যেন নিরাপদে বসবাস ও প্রজনন করতে পারে সেই জন্যে সড়ক ও বিলের পাশ দিয়ে থাকা গাছগুলোতে পাখির বাসা হিসেবে মাটির হাড়িও স্থাপন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে “রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখি পল্লী” শীর্ষক প্রকল্প স্থাপনের জন্য সকল প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। ইউএনও বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাসহ উপজেলার সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে প্রথমবারের মতো উপজেলায় কোন এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এলাকাটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে স্থানীয়দের পাশাপাশি আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষরা যান্ত্রিক এই জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু বিনোদন গ্রহণ করতে পারবেন।
হরেক রকমের হাজার হাজার পাখির কিচিরমিচির শব্দে সকাল হবে এই অঞ্চলের মানুষদের। পরিবারের সকলকে নিয়ে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রে এসে পাখি দর্শনের পাশাপাশি কিছুটা সময় প্রকৃতির মাঝে কাটানোর সুযোগ পাবেন। অপরদিকে হাজার হাজার পর্যটকের আগমনের ফলে এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের। পাল্টে যাবে অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। মেঠো সড়কের সংযোগস্থলে ছোট কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখি পল্লী গড়ে তোলার দৃশ্যমান কাজ শুরু করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিলের পাশে হাতিরপুল নামক স্থানে ঘুরতে আসা সুমন, পলাশ, লাবনী, নাহিদসহ অনেকে জানালেন, শুনছি এই বিলটি নাকি আধুনিক করা হবে। সেই ইউএনও নাকি বারবার পরিদর্শন করেছেন বিলটি। বিলের আশেপাশে এলাকায় তিনি যদি আধুনিক করে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে খুব ভালো হবে। আমরা মনে করি জায়গাটি একটা পর্যটন এলাকা হিসেবে ভালো পরিচিত পাবে।