মোসাদ্দেকুর রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে রংপুর বিভাগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার হিসেবে খ্যাত নীলফামারীর ডোমারের ঐতিহ্যবাহী ‘শহীদ ধীরাজ-মিজান স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তন’-এর ত্রি-বার্ষিক কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২৫ইং নির্বাচন সম্পুর্ন হয়।
উক্ত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক মেয়র আলহাজ্ব মনছুরুল ইসলাম দানু এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান সুমন। তিনি পেয়েছেন ১৫৩ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনজারুল হক তিনি পেয়েছেন ১১০ ভোট।
২৬শে এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাঠাগারের নিজস্ব ভবন কার্যালয়ে ত্রি-বার্ষিক কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। যা বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষন এবং ভোট গ্রহণের কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ প্রশাসক নাজমুল আলম বিপিএএ। ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে ভোট গণনা শেষে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দ্বায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি, সম্পাদক সহ মোট ১৭টি পদে ২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৩ জন। এদের মধ্যে, সভাপতি পদে আলহাজ্ব মনছুরুল ইসলাম দানু, অর্থ সম্পাদক শ্রী শেখর চন্দ্র সাহা এবং গ্রন্থাগার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ইলিয়াস হোসেন। এই তিন পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ১৬৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরননবী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডাঃ ফিরোজ আলম চিনু তিনি পেয়েছেন ১১৩ ভোট।
সহ-সভাপতি পদে ১৭৯ ভোট পেয়ে ১ম হয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি মোজাফফর আলী এবং ১৬৬ ভোট পেয়ে ২য় হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বীর মুক্তিযোদ্ধা সহিদার রহমান মানিক পেয়েছেন ১০৯ ভোট এবং যুগান্তর প্রতিনিধি আবু ফাত্তাহ কামাল পাখি পেয়েছেন ৭৬ ভোট।
সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ১৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সমকাল প্রতিনিধি রওশন রশিদ এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম কুদ্দুছ আইয়ুব পেয়েছেন ১০৬ ভোট। ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রাশেদ মাহমুদ উজ্জ্বল এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোজাম্মেল হক মানিক পেয়েছেন ১১৩ ভোট।
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর আল-আমীন রহমান এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৯৬ ভোট। মহিলা সম্পাদিকা পদে ১৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নাজিরা আখতার চৌধুরী ফেরদৌসী এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাইলী বানু লিলি পেয়েছেন ১১২ ভোট।
কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৮ জন এর মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন ৬ জন। ২২৯ ভোট পেয়ে ১ম হয়েছেন আলহাজ্ব জহিরুল হাসান দিপু, ২১৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন শ্রী অমিত কুমার দাস নয়ন, ২১৫ ভোট পেয়ে ৩য় হয়েছেন রইসুল হক সাচ্চু, ২১৪ ভোট পেয়ে ৪র্থ হয়েছেন হাফিজুর রহমান মন্ত্রী, ২১০ ভোট পেয়ে ৫ম হয়েছেন সাজ্জাদ কিবরিয়া পাপ্পু, এবং ১৯৪ ভোট পেয়ে যৌথ ভাবে ৬ষ্ঠ হয়েছেন দুইজন বায়েজিদ হোসেন জুয়েল ও সফিয়ার রহমান রতন, পরে এই দুইজনের নাম লটারি করে বায়েজিদ হোসেন জুয়েল নির্বাচিত হয়েছেন।
ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে কোন রকম সহিংসতা, গন্ডগোল ছাড়াই শান্তিপূর্ণ উৎসব মূখর পরিবেশে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উল্লেখ্য যে, ১৯৫০ সালে শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার ও ক্রীড়াঙ্গনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায় ডোমারে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল’জিন্নাহ মেমোরিয়াল হল’। স্বাধীনতার মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখপানে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন ডোমারের দুই কৃতি সন্তান শহীদ আনজারুল হক ধীরাজ এবং শহীদ মিজানুর রহমান মিজান। এরই ধারাবাহিকতায় জিন্নাহ মেমোরিয়াল হল থেকে নামকরণ করা হয় শহীদ ধীরাজ-মিজান স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তন।
অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক সাংস্কৃতিক এর পাশাপাশি নানা উন্নয়ন মূলক কাজ করে যাচ্ছে। অত্র প্রতিষ্ঠানটি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। শহীদ ধীরাজ-মিজান স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তনটি উত্তর জনপদের ‘আলোকবর্তিকা’ হিসেবেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।