নাগরিক ভাবনা:আবু মহীউদ্দীন: সরকারের উপদেষ্টা জনাব ফাওজুল কবির খাঁন একটা ভালো কাজে হাত দিয়েছেন। কিন্তু সন্দেহ জাগে আমাদের মেধাবী কর্মকর্তাদের কতটুকু মানাতে পারবেন? কেননা আমাদের কর্তাবাবুরা ছাই দিয়ে দড়ি পাকাতে সিদ্ধহস্ত।
যখন সরকারি চাকুরী করতাম খুবই একটা ন্যায্য বিষয়ে কয়েক বছর সচিবালয়ে যাতায়ত করতে হয়েছে। কাজটা ৭ দিনের বেশী নয়।
কিন্তু এতো অল্প সময়ে সচিবালয় কোন কাজের ফয়সালা হলেতো মাননীয়দের গুরুত্ব এবং মর্যাদা কোনটাই  থাকেনা।আমাদের বিষয়টা মিটিংয়ে উপস্থাপন করতে হবে। কর্মচারী / কর্মকর্তাদের কোন বিষয় মিটিং পর্যন্ত নিয়ে যেতে  কতগুলো হার্ডেল অতিক্রম করতে হয় তা উপদেষ্টা মহোদয়ের অজানা নয়। একজনকে ম্যানেজ করি তো পরের পরের মিটিংয়ে অন্যজন উপস্থাপনের দ্বায়িত্ব নেন। তাকে আবার প্রস্তুত করতে হয়। মজার ব্যপার হলো অনেকগুলো মিটিং হয়েছে  সব মিটিং এর আপ্যায়ন খরচ আমাদের বহণ করতে হতো। পরে খবর নিয়ে জেনেছি ঐ মিটিংয়ে যে কয়টি বিষয় উঠবে প্রত্যেককেই মিটিং খরচ বহণ করতে হয়।
এই আপ্যায়ন মানেতো চা সিংগারা বা বিস্কুট নয়। অভিজাতরা মিটিং করবেন তাদের জন্য যে সব খাবারের দাম আমরা দিয়েছি এসব খাবার খাওয়াতো দুরের কথা নামই জানতামনা। আজো খাওয়া সম্ভব হয়নি।  ওখানেতো দেশের রুচিবান মানুষেরা বসেন। তাদের খাওয়া বা রুচির সাথে আমাদের তুলনা করলেতো চলেনা। প্রশ্ন একটা জেগেছিল শুধু আমাদের বিষয়তো মিটিংয়ে ওঠেনা। পরে জেনেছি সবার কাছ থেকেই খরচ নেওয়া হয়। বিষয়টা এখানে শেষ হলেও হতো। ধরুন মিটিংয়ে ২/৩ টি বিষয় আলোচনার পর মহোদয় বললেন এটা পরের মিটিংয়ে হবে। ব্যাস আবার কপাল ভাঙবে। আবার মিটিংয়ে তালিকাভুক্ত করার জন্য আপনার ভুমিকা রাখতে হবে এবং মিটিং খরচ দিতে হবে। এমনো হতে পারে কোন কারণে মিটিং ক্যান্সেল হলো। আবার আপ্যায়ন খরচ দিতে হবে।
একটা বিষয় মনে হতো। আমি যদি সচিব হতাম তাহলে ১নং কাজটাই করতাম তাহলো দেশের সকল অফিসে মিটিংয়ে আপ্যায়ন ব্যবস্থা তুলে দিতাম। ভয়ের কারণ নেই আমি সচিব হইও নি এখন তো অবসরপ্রাপ্তÍ। বলা যাবেনা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগতো হতেও পারে ,তখন দেখা যাবে। হলঘরের বাইরে কড়িডোরে টেবিলে গরম পানি , চাপাতি ,চিনি , কফি আর টোষ্ট বিস্কুট রাখার ব্যবস্থা করতাম। আমাদের চেয়েও ২/১ টা উন্নত দেশে আমি তা দেখেছি। এই জন্য সাহস করে বললাম। সে সব দেশে আমরা ৮/৯ লাখ টাকা খরচ করে মজুরী দিতে যাই।
উপদেষ্টা মহোদয়কে এসব বিষয় মনে করে দেওয়ার প্রয়োজন নাই। বিষয়গুলি তিনি খুব ভালো ভাবেই জানেন। এরশাদ সাহেব সাইকেলে চড়ে অফিস যেতেন। পরে সাইকেলতো দুরের কথা পারলে বিমানে করে অফিসে যান। প্রায়ই স্বপ্ন দেখতেন আর হেলিকপ্টারে করে জুমার নামাজ পড়তে যেতেন।
সচিবালয়ের মাননীয়গণ যখন জেলায় আসেন তখন কয়েকদিন ধরে স্থানীয় অফিসের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি যখন জেলার সার্কিট হাউসে আসবেন তার কয়েকঘন্টা আগে থেকে প্রশাসনের সবাই সেখানে কাতারবন্দি  হয়ে থাকেন। একেকজন একেক মতলবে আসেন। অধিকাংশই বডি শো করতে আসেন। মাননীয়দের নজরে পড়া খুবই জরুরী বিবেচনা করেন। ইদানিং প্রশাসনের যে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা কোন অফিসে গেলে ফুলের তোড়া দেওয়ার বিধান চালু হয়েছে। প্রেষ্টিজ রক্ষার জন্য এই তোড়া ছোট বড়র উপরে আবার রুচির পরিমান নির্ভর করে। এই ফুলের তোড়া কি কাজে লাগে তা আমরা জানিনা। এটাতো মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ব্যপার। তবে এই তোড়া তৈরি করতে খরচ যা লাগে তাতো লাগেই , কয়েকজন  কর্মচারীকে কয়েকবার ফুলের দোকানে যেতে হয়। সংগ্রহ করতে হয়, সংরক্ষণের জন্য ব্যস্তো থাকতে হয়। জন দুয়েককে আবার তোড়া ধরে থাকতে হয়।
রাজধানীর সকল কর্মকর্তার  আলাদা গাড়ীর কেনো প্রয়োজন। গাড়ীর দামের উপর মর্যাদা এবং ক্ষমতা নির্ভর করে।
বেসরকারি গাড়ী ১লিটারে ১০ কিলোমিটার চলে  আর সরকারি গাড়ী এক লিটারে ৪ কিলোমিটারের বেশি যেতেই পারেনা। গাড়ীর তেল চুরি হয়, পার্টস কিনতে চুরি হয় , গাড়ী কিনতে দূর্ণীতি হয়, পরিবহন পুল দেখাশোনা করার জন্য কর্মচারীর বহর পুষতে হয়, জায়গা লাগে।মেরামতির জন্য খরচের নয় ছয় কে না জানে।  একজন ড্রাইভার পুষতে হয়। ড্রাইভারের বেতন ভাতা ওভার টাইম দিতে হয়। অফিসে সাহেবকে পৌছে দিয়ে তিনি তো বসে থাকেন। ১ জন কর্মকর্তার জন্য ১ গাড়ী কারো কারো আবার আরো বেশি কেনো প্রয়োজন? অনেক লেখালেখির পরেও নির্বাচনের আগে প্রায় ২ কোটি টাকা দামের ২৬৩ টি গাড়ী কেনা হয়েছে ইউএনও সাহেবদের জন্য। এটার কোন প্রয়োজন ছিলনা। এসব গাড়ী বেসরকারিভাবে চললে ৩০ বছর যাবে, আর সরকারিভাবে সর্বোচ্য ১০ বছর। গত সরকার আর কিছুদিন থাকলেই উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ডিসি সাহেবরা প্রেষ্টিজ রক্ষার্থে একজোট হতো এবং তাদের গাড়ীগুলো বদল করে দামী গাড়ী নিতো। এসব গাড়ীতো বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়।  গাড়ী বিলাস বলে কাকে?
উর্ধতন কর্মকর্তাদের গাড়ী কেনার জন্য লোন দেওয়া আছে। তারা লোনের টাকা দিয়ে একাধিক গাড়ী কিনেছেন , সে সব উবারে খাটান , আয় করেন। তিনি সরকারে কাছ থেকে তেল , ড্রাইভারের বেতনও নেন।  কিন্তু সরকারি গাড়ীই ব্যবহার করেন। উর্ধতনরা তাদের ছেলেমেয়েদর  জন্যও সরকারি গাড়ীর  ব্যবস্থা করেন তেল মবিল ড্রাইভার সহ।
রাজধানীতে এখন উবার পাঠাও বিভিন্ন সার্ভিস আছে , গাড়ীও ভালো। ফোন করার ৫/৭ মিনিটের মধ্যে গাড়ী এসে হাজির। প্রযুক্তির কল্যাণে ভালো রাস্তা দিয়ে নিরাপদে আপনাকে পৌছে দিবে। ভাড়া নিয়ে চলে যাবে। সচিবালয়ের সকল কর্মকতা উবার ব্যবহার করলে সমস্যা কোথায়? কিছু দেশ আছে যাদের সমানতো দুরের কথা কাছাকাছি যেতেও ৫০ বছর লাগবে, সেসব দেশের প্রধানমন্ত্রী মেট্রোতে চড়ে, আর আমাদের ঘোড়ারোগ কেন? কত শতকোটি টাকা সাশ্রয় হবে এনিয়ে একটা স্টাডি করা যেতে পারে। ড্রাইভার, পরিবহন পুল, গ্যারেজ, গোডাউন, পরিবহন পুলের কর্মচারী মেইনটেনেন্স, তেল মবিল কেনা কাটা চুরি হওয়ার কোন ঝুঁকি নাই।
একজন কর্মকর্তা অফিসের হলে অফিসে ফুল টাইম থাকবেন, ফিল্ডের হলে ফিল্ডে থাকবেন। তার নিজস্ব একটা ফরমেট থাকবে। যেটা হবে অটো জেনারেটেড। তিনি প্রতিদিনের কাজের সারাংশ আপলোড করবেন। কোন কাজের জন্য কত পয়েন্ট তা নির্ধারিত থাকবে। আপলোড করলে তিনি তা পাবেন। এপিএ অনুসারে তার কার্যক্রম মার্কিং হবে। তিনি নিজে বুঝতে পারবেন , তার প্রমোশন ইনক্রিমেন্ট এসব কখন হবে তার জন্য কি করতে হবে। তার নিজের পারফমেন্স নিজেই রেকর্ড করবেন। দুণীতিবাজ কর্মকর্তারা সব সময়ই লাভবান হয়ে থাকেন। তিনি কাজে ফাঁিক দেন, দূর্ণীতি করেন, মানূষকে হয়রানি করেন, সরকারের ক্ষতি করেন। এর পর মামলা হয়, মামলা চলে ১৫/২০ বছর। সরকার কখনো মামলায় জিততে পারেনা। তার অনেক কারন আছে। এর পর ১৫ বছরর তিনি কাজ করলেননা। পরিবারের সদস্যরা কষ্ট করলো, শেষে চাকুরি ফিরে পেলেন এবং সকল আর্থিক সুবিধা আদায় করলেন। আর সরকার পরিবর্তন হলে এদের পেয়াবারো। আগের সরকার তাকে বঞ্চিত করেছে, তকমা লাগিয়ে দিয়েছে ইত্যাদি বলে প্রয়োজনে আন্দোলন করে  প্রমোশন বাগিয়ে নিলেন। এবারে যে এ সব হয়নি সে বিষয়ে কেউই গ্যারান্টি দিতে পারবেনা।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে এমন কোন জেলা নেই যে জেলার উপজেলায় গিয়ে ডিসি সাহেবরা সদর দপ্তরে ফিরে আসতে পারেননা। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। তিনি ভালো গাড়ী ব্যবহার করেন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে গত ৪০ বছরে কোন ডিসি কোন উপজেলায় অবস্থান করেননি। কিন্তু ডিসি সাহেবরা নিয়মিত ট্যুর প্রোগ্রাম করেছেন। উপজলায় অবস্থাান দেখিয়েছেন। টিএ বিল করেছেন বিল নিয়েছেন। শুধু তিনিইতো নন ডিসি সাহেব থাকা মানে তার ড্রাইভার এবং তার গানম্যান থাকা। তাদেরও টিএ ডিএ দিতে হয়। এটাতো অপরাধ। সচিব সাহেবরাকি এটা জানেনা।
জেলা প্রশাসক সাহেবরা পাবলিক এক্সামিনেশনে দ্বায়িত্ব পালন করেন সে জন্য সম্মানী নেন। তিনিতো সরকারী গাড়ী ঘোড়া ব্যবহার করে পাখীর নজরে ২/১টা সেন্টার দেখে আসেন তার জন্য তার সম্মানী কেন দরকার। এই টাকাটাতো আমার গরীব শিক্ষকদের  দেয়া যেতে পারে। আবার খরচ কমলে ছাত্র ছাত্রীরা ফরম ফিলাপের অধিক খরচের বোঝা থেকে বাঁচতে পারে। সংকোচন করতে চাইলে আরো ক্ষেত্র আছে, সময়মতো জানানো হবে।
ফেসবুক মন্তব্য


মতামত জানান :

 
 
 

শিরোনাম :

বগুড়ায় রানার প্লাজা থেকে তালা কাটার যন্ত্রসহ যুবক আটক রাজারহাটে খড়ের পিকআপে মিললো ৩৫কেজি গাঁজা,গ্রেফতার-১ নাট্য সমিতির সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের ৫র্ম দিনে মঞ্চায়িত হলো সংগীতানুষ্ঠান ফরিদপুরে চোরাই গরুসহ দুই চোর আটক সাদ পন্থীদের নিষিদ্ধের দাবীতে ঈদগাঁওতে বিক্ষোভ  পঞ্চগড় দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহের কবলে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে আখ মাড়াই মৌসুম শুরু তথ্য অধিকার বাস্তবায়ন ও পরবীক্ষণ কমিটির সাথে তথ্য কমিশনারে সাথে মতবিনিময় সভা নবাবগঞ্জে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ডোমারে ইপিল গাছ থেকে গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের খসড়া তালিকা প্রকাশ বিএনপি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে পঞ্চগড়ে আদালতে জনবল তোপের মুখে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত নদীতে নিখোঁজ দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার শেরপুরে  বিএনপির মনোভাব কি বদলাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের পাকিস্তান থেকে আমদানি বেড়েছে ২৭%,কমেছে ভারত থেকে আদমদীঘিতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে গাছ কাটার অভিযোগ, প্রশাসন নীরব তেঁতুলিয়ায় শীতবস্ত্র উপহার দিলেন আল খায়ের ফাউন্ডেশনের মালয়েশিয়ায় বড়দিন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবির জ্যাকেট-আইডি কার্ড না দেখিয়ে আসামি ধরছে না বাংলাদেশে ছাত্রদের নতুন দল আসছে, টার্গেট কি ক্ষমতা? পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ায় ৯ কোটি টাকার মাদকসহ যুবক আটক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে ফাঁসি দেওয়া হবে-হামিদুর রহমান আযাদ ট্রাক-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ নিহত-২ ফরিদপুরে বিদেশি পিস্তলসহ দুই সন্ত্রাসী আটক কবিতঃ চির স্বরণীয় কবি নজরুল-লেখক সৈয়দ হারুনুর রশীদ ঠাকুরগাঁও এর বালিয়াডাঙ্গীতে শ্যালকের হাতে দুলাভাই খুন। পাকিস্তান থেকে আলু-পেঁয়াজ ও শিল্পের কাঁচামাল জাহাজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে পারে
Translate Here »