নাগরিক ভাবনা: আবু মহী উদ্দীন: সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন দাবী দাওয়া নিয়ে কোন কর্র্তৃপক্ষই মাথা না ঘামানোর জন্য এবারে আন্দোলনকারীদের একজন বিষ খেয়েছে বলে খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে। কথাবার্তা দুদিক থেকেই চলছে। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্ক চলছে। সরকারের উদ্যেশ্য বাস্তবায়নে জনসেবার জন্য সরকারি কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করবেন এটাই কাংখিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ঘোষণা দিয়ে ২০০৯ সালে দায়িত্বে আসেন। প্রথম দিকে বিরোধীরাতো বটেই নিজ দলের সদস্য সরকারি কর্মচারীরাও বিষয়টি না জানার কারণে ব্যাঙ্গ বিরূপ করেছেন। সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তারাও তেমন কোন ব্যাখ্যাও দিতে পারেননি। প্রথম দিকে আমরা ডিজিটালের সজ্ঞা যোগাড় করার চেষ্টা করেছি।
এমনকি ডিসি সাহেবরাও ডিজিটালের ব্যাখ্যা দিতে হিমসিম খেয়েছেন। আজ ২০২৩ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবতা এবং এর কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন বিশ্বনেতা। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করছি। আজ আমরা ৩৩ নং পারমনবিক যুগে , স্যাটেলাইট যুগে ৫৭ নন্বরে , এশিয়ায় ট্যানেল নির্মানে প্রথম , খাদ্য , মাছ উৎপাদনে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন , মেট্রোরেল , এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে আমাদের সম্মান বাড়িয়েছে। পদ্মা সেতুতো এখন পুরনো ব্যপার। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের নাড়ীর খবর রাখেন, হেকিম সাহেবরা যেমন রোগীর নাড়ী দেখে চিকিৎসা করেন তেমনি প্রধানমন্ত্রী জাতির নাড়ী দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন। প্রথম দফায় তিনি গোছগাছ করেছেন। ২য় দফায় স্বাধীনতা ও মানবতা বিরোধীদের বিচার করেছেন। জাতির পিতার হত্যাকান্ডের বিচার করেছেন। এবারে হাত দিয়েছেন জিরো টলারেন্সে ,মন্ত্রীরাও বাধ্য হয়ে জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন। করকারি অফিস প্রধান বাধ্য হয়ে নিজ নিজ অফিসে ব্যানার টানিয়ে লিখে রেখেছেন ‘ আমি এবং আমার অফিস দূর্ণীতিমুক্ত। বিষয়টি পুরোপুরি কার্যকর হলে জাতি কত উপকৃত হতো। আমরা খুব আশাবাদী হয়েছি। কিন্তু সমস্যা হলো মন্ত্রণালয়ে এবং অফিসে সাধুবেশী শয়তানেরা আছে। তারা যে মন্ত্রী বা অফিস প্রধানের কথায় একেবারে সৎ হয়ে যাবেন এমন ভাবার কোন কারণ নাই। তারা বেশ মতলববাজ এবং স্থায়ী কর্মচারী। আয় ইনকামের রাস্তা তাদের জানা আছে। তারা জানে মন্ত্রী বড়জোর ৫ বছর। আর তারা সারাজীবন অর্থাৎ ৩০/৩৫ বছর। সুতরাং বড়জোর বছর পাঁচেক ধৈর্য ধরতে হবে। যত নিয়মকানুন সহজ হবে সাধারণের বোধগম্য হবে তত সমস্যা।
নিয়মকানুন সহজ করার সময় বাগড়া দিবে। আইন কানুনের দোহাই দিবে। আইন কানুনের দোহাই দিয়ে হাজারো সমসার কথা বলবে। কেননা অনুমোদন পদ্ধতি যত জটিল হবে ততো তাদের সুবিধা। এসব সেবা গ্রহীতারা ভাল বোঝে বা জানে। অন্যান্য মন্ত্রীরাও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুর মিলিয়ে জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন, কাজও করছেন। তবে অভিজ্ঞ সরকারি কর্মচারীরা তা সহজে হতে দিবেনা এটাই স্বাভাবিক। তবে মন্ত্রী সাহেবরা যদি একটু স্টাডি করে অগ্রসর হন তাহলে তা কঠিন হবেনা। কেননা সচিবদের উপর ছড়ি ঘোরাতে হবে। তাদের কাজের তদারকি করতে পারেন তাহলেই সম্ভব। আর যদি সচিব নির্ভর হয়ে পড়েন তবেই অসম্ভব। সরকারি চাকুরী জীবনে দেখেছি আমাদের এসব বিজ্ঞ কর্মচারিদের যাদের জ্ঞানের বহর দেখলেই অবাক হতে হয়। এরা ছাই দিয়ে দড়ি পাকাতে পারে। এরা সরকারের বোঝা, এসেট নয়। এদেরকে বিদায় করা জরুরী কিন্তু উপায় নাই। সরকারি চাকরী হতেই যা সমস্যা কিন্তু চাকুরী যায়না। তাদেরকে খুশী করার জন্য পদ না থাকলেও পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতিপ্রাপ্তরা সবাই যে যোগ্যতাবলে পদোন্নতি পান তা নয়। সরকারি চাকুরেদের মিটিং এর বহর কিছুুটা কমানো যায় কিনা বিবেচনা করা যেতে পারে। কেননা মন্ত্রণালয়ে মিটিংয়ের নামে সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো ফাইল নিষ্পত্তি , ফাইলে স্বাক্ষরের উপর নির্ভর নয়, অনলাইন করতে হবে। কোন ফাইল কখন কার কাছে আছে কখন স্বাক্ষর হচ্ছে, কত সময় লেগেছে এসবের রেকর্ড দরকার। এসবের ফরমেট তৈরি করা যেতে পারে। ফাইল নিষ্পত্তির বিষয়ে কোন অজুহাতই গ্রহণযোগ্য হবেনা। বর্তমান সময় এপিএ স্বাক্ষরের চল রয়েছে। এটা কাগজে কলমে চালু হলেও চর্চায় ততটা চালু নাই। এতেও বিজ্ঞজনেরা ফাঁকফোকর বের করতে শিখেছে। সরকারি চাকুরী থেকে এই সব অপদার্থ বিদায় করতে পারলে সরকারি কাজে বেশী গতিশীলতা আসতো। উন্নত বিশ্বে সরকারের দল বদলের সাথে সাথে কর্মচারীরাও বদল হয়। আমাদের দেশে সে রকম নয়। সরকারি চাকুরীর নিয়োগ পদ্ধতির বিভিন্ন ফাঁক ফোকরে কিছু অপদার্থ ঢুকে যায় এবং তারা সরকারের বোঝা। এপিএ কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করা দরকার। না পারলে তিরস্কার না করে সরাসরি বিদায় করা দরকার। দেশের গরীব মানুষের ট্যাক্সে অচল অথর্ব রাজকর্মচারী পোষার কোন মানেই হয়না।
সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের বর্তমান পদ্ধতি মোটেও জাতির আকাংখা পুরণের উপযুক্ত নয়। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা , গণতন্ত্র , মানবাধিকার নিয়ে যে ভাবে যখন তখন স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় , ডিবি কার্যালয়ে , রাজনৈতিক দলের সাথে সভা করছে , কাউকে কাউকে কৈফিয়ত তলব করছেন , দেশে মিটিং মিছিল হলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশের রাস্ট্রদূতও তো আমেরিকায় থাকেন। তিনি কি এসব করতে পারেন? গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের পর সরকারী কর্মচারীরা সব বদল হয়ে যায়। পিটার হাস যদি এটার একটা পরামর্শ দিতো। তাহলে বোধহয় ভালোই হতো। ভাবুনতো একজন মেধাবী যুবক কোন কারণে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সরকারি চাকুরী যোগাড় করতে পারলো না , তার জীবনটা ঘোর অনিশ্চয়তার নিকশ অন্ধকারে পতিত হলো। বিপরিতক্রমে কপালগুণে একজন অযোগ্য মানুষ সরকারি কর্মচারীতে স্থান করে নিল। সরকারের উদ্দেশ্য সাধারণ নাগরিকের কল্যাণ হলেও সরকারি চাকুরীতে কোটার জন্যই হোক , তদবিরেই হোক , ভাগ্যগুনেই হোক বা অন্যভাবেই হোক কিছু অচল অর্থাৎ অকার্যকর মানুষ সরকারী চাকুরীতে ঢুকে যায়। এই অচল কর্মচারীকে জাতি ৩০/৩৫ বছর বেতন দিয়ে পোষে আবার ৩০/৩৫ বছর পেনশন দিয়ে পোষে। চাকুরির বাইরে এমন কিছু মানুষ আছে যারা দক্ষতার সাথে সরকারি দ্বায়িত্ব পালন করতে সক্ষম। আমার ধারণা ক্ষেত্র বিশেষে তারা বেশি ভালো করবেন। এদেরকে সরকারি চাকুরীতে ঢোকার পথ রুদ্ধ করার জন্য জাতীকে বঞ্চিত করা হয় বলে আমি মনে করি। আবার ক্যাডার ব্যবস্থা চালু করে দেশের উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে বিভাজনের মধ্যে ফেলানো হয়েছে। এতে ক্যাডার সার্ভিসের লোকেরা নিজেদের কুলিন বলে ভাবে , অন্যেরা হীনমন্যতায় ভোগে। এটা একটা উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে বরং প্রতিবন্ধক।
আমাদের দেশে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ করে এর পর প্রায় সারাজীবন ট্রেনিং করানো হয় সরকারি খরচে। এতে সময় এবং অর্থ ব্যয় হয় প্রচুর। কোথাও কোথাও আবার এসব অর্থের নয় ছয় হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়। যে পদে নিরেয়াগ করা হয় , ট্রেনিংয়ে থাকার কারণে পদে লোক থাকেনা ফলে সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রকল্প গ্রহণ করলে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়না। তার চেয়ে বিভিন্ন পেশায় ঢোকার জন্য সরকারি / বেসরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থাকবে। যারা আগ্রহী , তারা সেখানে নিজ দ্বায়িত্বে ট্রেনিং নিবে। স্কোরিং সিস্টেমে রেজাল্ট করা যেতে পারে। সরকারি চাকুরীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হলে আগ্রহীরা আবেদন করবে। ট্রেনিংয়ে কিছুটা বাছাই হয়ে যাবে। লাখে লাখে আবেদনও হবেনা। পরে আর ততবেশী ট্রেনিং করাতে হবেনা। সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৪০ হলেতো কোন সমস্যা নাই। যোগ্যতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করা দরকার।
তবে রিটায়ারমেন্টের বয়স নির্ধারিত থাকবে। একই সঙ্গে অথর্ব , অযোগ্য কর্মচারীদের বিদায় করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এতে দেশের শিক্ষিত তরুনরা কাংখিত সম্মান পাবে। জাতিও উপকৃত হবে। এতে জাতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থাকবেনা। কেননা কোন কর্মকর্তা গোটা কর্মজীবনে তার উত্তরাধিকার নির্বাচন করতে বা তার উত্তরসুরী তৈরি করতে না পারলে তারতো দায় অস্বীকার করার কোন সুযোগ নাই। এই অতি যোগ্যতার লোক আমাদের বোঝার উপর শাকের আটি। একজনের চাকুরীর মেয়াদ এক্সটেনশন করলে অধস্তন ৫/৬ জনের পদোন্নতি আটকে যায়। তারা কি কাজে উৎসাহ পাবেন? প্রশ্নটা খুব সোজা কিন্তু জবাবটা কঠিন। তার খুব প্রয়োজন হলে বড়জোর তাকে উপদেষ্টা বা পরামর্শক নিয়োগ করা যেতে পারে।
যারা রোদে পুরে , বৃষ্টিতে ভিজে রাজপথে নিবেদন করছে দিনের পর দিন , এদের সাংগঠনিক শক্তি নাই , এদের কোন রাজনৈতিক দল নাই , এরা জাতির সেবা দিতে চায় , বিবেচনা করুননা তাদের বিষয়টা।