নাগরিক ভাবনা,নুরুল্লাহ মাসুমঃ বাংলাদেশ স্কাউটস বিশ্ব স্কাউটস সংস্থা অনুমোদিত দেশের সর্ব বৃহৎ শিশু-কিশোর-যুব সংগঠন। এই সংগঠনটি বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত। এখানে সরকারের বিপুল আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২০০৮ সাল থেকে এই সংগঠনটি আওয়ামীপন্থী আমলাদের কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। বৃহত্তর এই শিশু-কিশোর-যুবা সংগঠনটির ত্রৈবার্ষিক কাউন্সিল সভার নির্ধারিত তারিখ ছিলো ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ২০২৩। নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠান না করে নির্বাহী কমিটির মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধি করে ৫ জুন পর্যন্ত করা হয়।
এই বর্ধিত সময়ে তখনকার প্রধান জাতীয় কমিশনার, দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ও সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান মহামান্য রাষ্ট্রপতির দপ্তরে বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে আরেক সাবেক কেবিনেট সেক্রটারি (যিনি অবসর নেয়ার পর আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন) জনাব কবির বিন আনোয়ারকে বিধিবহির্ভুতভাবে জাতীয় কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এই কবির বিন আনোয়ার রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়েও বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই প্যানেলে সভাপতি হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক সিনিয়র সচিব (জনপ্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র), পরবর্তীতে আওয়ামী সরকার আস্থাভাজন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান নিজেই। নির্বাচনে এই প্যানেল থেকে ড. মোজাম্মেল হক খান সভাপতি নির্বাচিত হন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জনাব মো. আবুল কালাম আজাদ (সাবেক মুখ্য সচিব) সমর্থিত প্যানেল থেকে সহ সভাপতি, প্রধান জাতীয় কমিশনার এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।
কাউন্সিল সভাটি ২ জুন ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলাকালীন, যখন নির্বাচন শুরু হয়ে ৩৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, তখনই তখনকার সভাপতি জনাব আবুল কালাম আজাদ, এমপি সভা মুলতবী ঘোষণা করেন; যা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভুত। মুলতবী সভা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান থাকলেও তা অনুসরণ না করে দীর্ঘ ১ মাস ৪ দিন পরে ৬ জুলাই ২০২৪ তারিখে মুলতবী সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে ড. মোজাম্মেল হক খান আমলাতন্ত্রের সকল প্রকার ক্ষমতার অপ্রয়োগ (ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং) করে এবং জনাব কবির বিন আনোয়ার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করেন। এই প্যানেল থেকে একমাত্র সভাপতি পদে বিজয়ী হন ড. মোজাম্মেল হক খান।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুটি প্যানেলের নেতৃত্বদানকারী ড. মোজাম্মেল কহ খান ও আবুল কালাম আজাদ ১/১১ এর পর স্কাউটের নির্বাচিত কমিটিকে রাষ্ট্রপতিকে প্রভাবিত করে বাতিল করে এই ১৭ বছর যাবৎ বাংলাদেশ স্কাউটসে একটি আওয়ামী দুর্বৃত্তায়ন প্রতিষ্ঠা করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর পরাজিত প্রধান জাতীয় কমিশনার কবীর বিন আনোয়ার (আওয়ামী লীগের সদস্য) এবং সদ্যপ্রাক্তন সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (আওয়ামী সংসদ সদস্য) আত্মগোপনে আছেন। নির্বাচিত প্রধান জাতীয় কমিশনার শাহ মোহাম্মদ কামাল গ্রেফতার হয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ স্কাউটস জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছে। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ স্কাউটসের গঠনতন্ত্রের ২৬ (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউট-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ স্কাউটস-এর ২ জুন ও ৬ জুলাই ২০২৪ তারিখে বিধি বহির্ভুতভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাতিল করে একটি “অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় নির্বাহী কমিটি” গঠন করার জন্য অনুরোধ জানাই। বাংলাদেশ স্কাউটসের উপদেষ্টা পরিষদের সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও দলনিরপেক্ষ সদস্য হলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাষ্ট্রদূত জনাব মোহাম্মদ আবু হেনা এবং সাবেক সচিব মুহঃ ফজলুর রহমান। এই দুজনের নেতৃত্বে এই দুজনের নেতৃত্বে গঠিত হোক বাংলাদেশ স্কাউটসের “অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় নির্বাহী কমিটি”, যারা স্কাউট সংগঠনের নিম্নপর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়-সর্বত্র সংস্কার কার্য পরিচালনা করবেন। গঠিত কমিটির কাজ হবে:
১. স্কাউটসের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা।
২. কমিটিতে স্বচ্ছ ইমেজের প্রকৃত স্কাউটারদের অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করা।
৩. সকল দুর্নীতিবাজ, রাজনৈতিক চেতনায় অভিযুক্ত, প্রমাণিত ব্যক্তিদের অপসারণ করা।
৪. গঠন ও নিয়মের প্রয়োজনীয় সংস্কার করার লক্ষ্যে লিডার ট্রেইনারদের নিয়ে গঠনতন্ত্র সংস্কার পরিষদ গঠন করা।
৫. নতুন “গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র” প্রণয়ন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।