জাহিদ হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি: শতবর্ষের সাক্ষী জেলার ঐতিহ্যবাহী দিনাজপুর জেলা কারাগার। এ কারাগারটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে ২৯.২৫ একর জমির মধ্যে অবস্থিত। ১৮৫৪ সালে এ কারাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৬ সালে আধুনিক মডেলে এ কারাগারটি পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়।
দিনাজপুর জেলা কারাগারে বন্দিদের ধারণক্ষমতা ৩১৫৩ জন। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১২০০ জন বন্দি অবস্থান করছে। বরাবরের মত এবারও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে কারাগারে নানা অয়োজন গ্রহণ করা হয়। এ বছর বন্দিদের মাঝে ভিন্ন রকমের এক উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। আগের বারের তুলনায় এ বছরে বন্দিরা ঈদ-উল-ফিতরের দিনে একে অপরের প্রতি কুশল বিনিময় এবং সম্প্রতি সহমর্মিতার বন্ধনে এক ভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।
ঈদের দিন কারাগারের ভিতরে-বাহিরে ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। বন্দিদের জন্য দিনব্যাপি পায়েস, পোলাও, গরুর গোস্ত, খাসির গোস্ত, মুরগির রোস্ট, রুইমাছ ভাজি, বুটের ডাল, আলুর দম, মিষ্টি, সালাদ, পান-সুপারী ইত্যাদি উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সাথে দেখা-সাক্ষাতের নিমিত্তে আগত দর্শনার্থীদের স্বাগতম দিয়ে কারা এলাকায় বরণ করা হয় এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়। আগত প্রতিটি দর্শনার্থীকে বন্দির সাথে সাক্ষাতের সু-ব্যবস্থা করা হয়। ঈদের দিনে বন্দিরে জন্য তার আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক অনীত নতুন ব্যবহার্য কাপড় তাৎক্ষনিক বন্দিদের সরবরাহ করা হয়। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে সকল বন্দিদের মোবাইল ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ঈদের পরের দিন নিজ নিজ পরিবার হতে আনয়নকৃত রান্না করা খাবার বন্দিদের সরবরাহ করা হয়। গত ৩০.০৩.২০২৫ খ্রিঃ ঈদ উপলক্ষে নারী বন্দিদের মায়ে প্রসাধনী সামগ্রী বিতরণ করা হয়। বন্দিদের প্রতি এই মানবিক সহযোগীতা তাদের ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ঈদের আগে মহান স্বাধীনতা দিবসেও উৎসব মুখর পরিবেশে বন্দিদের মায়ে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বন্দিরা আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন কারাগারে থেকেও ঈদের আনন্দ উপভোগ করা যায়, যা তাদের কাছে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
কেউ-কেউ বলেন আমরা কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারাগারের জেল সুপার মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন- “কারা মহাপরিদর্শক মহোদয়ের নির্দেশে কারাগারে সার্বিকভাবে উৎসবমূখর পরিবেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদ্যাপন হয়েছে”। বন্দীদের জন্য ছিল দিনব্যাপি উন্নত খাবার পরিবেশন, আনন্দঘন পরিবেশে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়, পারস্পারিক শুভেচ্ছো বিনিময়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আগত স্বজনদের সাথে সাক্ষাত এবং ফোনে কথা বলা ইত্যাদি। আর স্টাফদের জন্য ঈদের নামাজ আদায়, কোলাকুলি, শুভেচ্ছো বিনিময় এবং দুপুরে উন্নতমানের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন।
আইজি মহোদয় কর্তৃক প্রদত্ত বন্দিদের ও স্টাফদের জন্য পৃথক ঈদ শুভেচ্ছা বাসী পাঠ করে শুনানো হয়। ডিআইজি প্রিজন্স মহোদয় ফোনে স্টাফ ও বন্দিদের ঈদ শুভেচ্ছা জানান ও গৃহীত কার্যক্রম তদারকি করেন। বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় বন্দিদের দুপুরের উন্নত মানের খাবার বন্টন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি সকল বন্দি ও স্টাফদের ঈদ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। বিধায় এবারের ঈদ-উল-ফিতর উদ্যাপন এক অনন্য মাত্রা লাভকরে। তিনি আরো বলেন- কারাগারের বন্দিরাও সমাজের অংশ, তাদের জন্য ঈদের আনন্দ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। ভবিষতে এ ধরণের মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। সুশীল সমাজে কারাগারের এ মানবিক উদ্যোগ ব্যপক প্রশংসিত হয়।
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এটি ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন বন্দিদের প্রতি এমন সহযোগীতা ও সহমর্মিতা অব্যহত রাখার আহ্বান জানান। কারাগার শাস্তির স্থান নয় বরং এটি সংশোধনাগার, এ ধরণের উদ্যোগ সেই বার্তাই বহন করে।