ব্যুরো রিপোর্ট ঢাকাঃ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ডিবি। কিন্তু বছরের পর বছর জোরপূর্বক তুলে আনা, আটকে নির্যাতনসহ ডিবির বিরুদ্ধে ছিল নানান অভিযোগ। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে খোঁজ নেই সাবেক আলোচিত ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের। বর্তমান ডিবি প্রধান বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। ১ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নিয়েই নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন ডিবিকে গণমুখী করার। এখন ডিবিতে নেই কোনো ভাতের হোটেল, নেই নায়ক-নায়িকাদের আনাগোনা।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ডিবির কার্যক্রম নিয়ে রেজাউল করিম মল্লিক কথা বলেছে সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেই বাংলাদেশের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনেক। এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ডিবির পক্ষ থেকে সরকারকে যে ধরনের সাপোর্ট দেওয়া দরকার সবই দেওয়া হবে। মহানগরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় যা করণীয় সবই করবো।
মানুষের প্রত্যাশা পূরণে এরই মধ্যে ডিবিকে ঢেলে সাজিয়েছি। অধিকাংশই নতুন অফিসার ডিবিতে কাজ করছেন। তবে তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত তিন মাসে তাদের ভালো অর্জনও অনেক। এখন আর কেউ ডিবির জ্যাকেট ও আইডি কার্ড ছাড়া অভিযানে যায় না। অভিযানে যাওয়ার পর ডিবির সদস্য আইডি কার্ড না দেখালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। ৫ আগস্টের আগে ডিবিতে ভাতের হোটেলের অপবাদ ছিল। ছিল নায়ক-নায়িকাদের আনাগোনা। এসব এখন কিছুই হচ্ছে না। বর্তমান সময়ের অফিসাররা বেশিরভাগ সময় গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
প্রচলিত অপরাধের পাশাপাশি কিশোর অপরাধ, অনলাইন জুয়া, সাইবার ক্রাইম, ইকোনমিক ক্রাইম, সোশ্যাল মিডিয়া বুলিং ও গুজবসহ নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ ডিবি আজ সাহসিকতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করছে। ৫ আগস্টের আগে ডিবিতে ভাতের হোটেলের অপবাদ ছিল। ছিল নায়ক-নায়িকাদের আনাগোনা। এসব এখন কিছুই হচ্ছে না। বর্তমান সময়ের অফিসাররা বেশিরভাগ সময় গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ডিএমপির বিভিন্ন ডিভিশনে এলাকাভিত্তিক চোর, ডাকাত, খুনি, ছিনতাইকারীসহ অন্য অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ওপর নজরদারি ও ডাটা সংগ্রহ করছেন ডিবির অফিসাররা। এছাড়া ভুক্তভোগী যারা আসছেন তারা অভিযোগ দিয়ে চলে যাচ্ছেন, ডিবিতে ভাতের হোটেল বানানোর সুযোগ আর নেই।
৫ আগস্টের পরে বেশকিছু দিন ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল না। তখন মানুষ আতঙ্কের সঙ্গে ঢাকায় চলাচল করেছে। সেই পরিস্থিতি থেকে এখন অনেক ভালো। মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকায় ছিনতাইকারীদের তৎপরতা কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। সেখানকার পরিস্থিতিও এখন নিয়ন্ত্রণে। থানায় মামলা হলে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো তদন্ত করছে ডিবি। আসামিও ধরাও পড়ছে। ডিবিতে চৌকস, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন করে পাওয়া এই বাংলাদেশকে আমরা একটি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই।
ডিবির কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে নিয়ম মেনে তদন্ত হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকে জবাবদিহির মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমারও যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে সেটাকেও জবাবদিহির আওতায় আনবো। অভিযানে যদি কোনো সদস্য ডিবির জ্যাকেট ও কার্ড ছাড়া যায় তবে কেউ বিশ্বাস করবে না সে ডিবির সদস্য। আমি যোগদানের পরে একটি ডিজিটাল কার্ড করে দিয়েছি, যা সবাইকে অভিযানের সময় দেখাতে হবে। অন্যথায় ভুয়া ডিবি হিসেবে সে শনাক্ত হবে। ডিবি অফিসে কোনো রকম অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।