মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টারঃ গত দুই দিন আগে নওগাঁ শহরের খলিসাকুড়ি মোড় এলাকায় নওগাঁ-বগুড়া বাইপাস সড়কে একটি অটো রাইস মিলের সামনে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কোলা পালসা গ্রামের নিহত ওই দুই স্বামী-স্ত্রী শহর থেকে মোটরসাইকেল যোগে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে উক্ত স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাঁদের মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আর এভাবে প্রতিনিয়তই ঘটছে প্রাণঘাতি সড়ক দুর্ঘটনা। এদিকে এই সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণে হিসেবে সরু সড়ককেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি বেপরোয়া গতির চালকদেরও।
অভিযোগ সড়কটি সরু হওয়ার কারণে প্রায় ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে বাইপাস সড়কের এই সরু রাস্তায়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সড়কটির প্রশ^স্তকরণের জন্য ইতিমধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করেছেন সড়ক বিভাগ। কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ার কারণে এখনও শুরু হয়নি ৮কিলোমিটার সরু সড়কের প্রসস্তকরণের সেই কাজ। তাই সকল অভিযোগের তীর ছুড়ছেন সড়ক বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাদের কালক্ষেপনের কারণে এখনও নিয়োগ করা হয়নি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ফলে থমকে আছে সরু সড়কের প্রশ^স্তকরণের কাজ। তবে কিছু দায় স্বীকার করেছেন নওগাঁ সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ হলেই দ্রæত কাজ শুরু করতে পারবো। এদিকে সড়কটিকে যদি দ্রæত আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রশস্তকরণ করা হতো, তাহলে দুর্ঘটনা অনেক কম ঘটতো বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, নওগাঁর জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক হচ্ছে নওগাঁ-বগুড়া শহর বাইপাস। শহরের যানজট কমাতে এবং ভারী যানবাহনগুলো শহরের বাহির দিয়ে যাতায়াতের জন্য শহরের উত্তর দিকে দিয়ে এই বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়। এরপর সময়ের চাহিদায় এই বাইপাস সড়কের দুই পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা।
বিশেষ করে সড়ক ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় অটোরাইস মিল, কোল্ড স্টোরেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া প্রতিনিয়তই গড়ে উঠছে বিভিন্ন ভারী প্রতিষ্ঠান। ফলে এই সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহনের চলাচল অনেক বেশি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি প্রশস্তকরণ না করায় দুটি ভারী বাহন একসাথে ক্রসিং করতে গিয়ে ঘটছে নানা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। অথচ ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে কালক্ষেপন করায় প্রশস্তকরণের কাজ আটকে আছে সড়ক মন্ত্রণালয়ে। দ্রæত ঠিকাদার নিয়োগ করে আট কিলোমিটার এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির আধুনিকায়নসহ প্রশস্তকরণ কাজ সম্পন্ন করতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
নওগাঁর সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলমান জেলার ৩টি আঞ্চলিক ও ৩টি জেলা সড়ক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের মাধ্যমে নওগাঁ-বগুড়া শহর বাইপাস সড়কটি ৩৪ ফিট প্রস্থে উন্নীত করা হবে। প্যাকেজটির দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন (সিএস) অনুমোদনের জন্য অক্টোবর ২০২৪ এ সড়ক পড়িবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র ঠিকাদার নির্বাচন করতে গিয়ে প্রায় ৬ মাস সময় পার হলেও নজর নেই কর্তৃপক্ষের। দ্রæত ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা গেলে জনগুরুত্বপূর্ণ এই বাইপাস সড়ক প্রসস্থকরণের কাজ শুরু করে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সমাপ্ত করা সম্ভব হবে। প্যাকেজটির প্রাক্কলিত মূল্য ৩৪ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা এবং চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে ঠিকাদার নিয়োগের জটিলতার মারপ্যাঁচে আটকে আছে প্রশস্তকরণ কাজ।
মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার চালকরা বলেন, শহরের রাস্তায় সবসময় জ্যাম লেগেই থাকে। তাই সময় কমানোর জন্য শহরের এই বাইপাস রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে যাতায়াত করি। কিন্তু রাস্তাটি অনেক সরু। আবার মাঝে মাঝে সড়ক দূর্ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়। তাই খুব ভয় লাগে এই সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে। তারপরও চলাচল করতে হয়। তাই এই সড়কটি যদি দ্রæত প্রশ^স্তকরণ করা যেত, তাহলে খুব ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন তারা।
নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, সড়কটি নিরিবিলি হওয়ার কারণে সাধারণ পথচারী ও অনেক ছোট ছোট যানবাহনও শহরের যানজট থেকে রেহাই পাওয়ার আশায় এই বাইপাস সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু ১৮ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট ৮কিলোমিটার নওগাঁ শহর বাইপাস সড়কের এক প্রান্তে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক যার প্রস্থ ৩৪ ফিট অপর প্রান্তের সড়কটি ৩৪ ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়ক হওয়ার কারণে অধিকাংশ ভারী যানবাহনগুলো এই সড়ক দিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। বাইপাস সড়কের দুই প্রান্তের সড়ক ৩৪ফিট প্রস্থ হলেও মাত্র ৮কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাইপাস সড়কটি সরু আছে। যদি দ্রæত প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ সম্পন্ন করা যায় তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সকল পথচারী ও যানবাহনের জন্য নিরাপদ সড়কে পরিণত হতো। এবং দূর্ঘটনাও অনেকাংশে কমে যাবে। আশা করি দ্রুত ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে আমরা যথাসময়ে কাজটি শেষ করতে পারবো।