হানিফু আলী,স্টাফ রিপোর্টারঃ জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠে হযরত শাহ কামালের মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের মতো এবারও শুরু হওয়ার অপেক্ষায় বৈশাখী মেলা ও বার্ষিক ওরস। মেলা শুরু হওয়ায় অপেক্ষায় থাকলেও ইতিমধ্যেই মেলা এলাকায় শুরু হয়েছে প্রকাশ্যে মাদকসেবন ও বিক্রি।
প্রশাসন এসব মাদক সেবন ও বেচাকেনার বিষয় জেনেও নিরব রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন নাগরিকেরা। মেলাকে ঘিরে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত এই মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত, দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীরা এসে জড়ো হচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলা শুরুর আগেই মাজার এলাকার আশপাশে পাগলের বেশে অবস্থান নিয়েছে একদল মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। ইতোমধ্যে তারা প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন ও বিক্রি শুরু করেছে। রাতে মেলার মাঠে গাঁজার আসরে জড়ো হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী লোকজন। উপস্থিত ছিল শিক্ষার্থীরাও।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে সাংবাদিকরা সরেজমিনে গেলে একাধিক যুবককে গাঁজা সেবন করতে দেখা যায়। এসময় গাঁজা কিনতে দরদামও করতে দেখা যায় তাদের। কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে গাঁজা কিনতে এসে দৌড়ে পালিয়ে যায় । এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বরকত আলি বলেন, দুরমুঠ মাজার কেন্দ্রিক মেলা আগে ছিল আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় পরিবেশে। কিন্তু এখন সেটা পরিণত হয়েছে মাদকের আসরে। গাঁজার গন্ধে পথ চলা দায়। আমরা মেলাকে চাই, কিন্তু এই অশ্লীলতা ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়।
অপর বাসিন্দা আব্দুল বারিক জানান, “এ মেলায় শুধু গাঁজা নয়, জুয়া ও অশ্লীল নাচ-গানও চলত রাতে। এতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হওয়ার পথে ছিল। এবার মেলা শুরুর আগেই গাজার ব্যবসা শুরু হয়ছে। প্রশাসন কঠোর না হলে এই মেলাকে কেন্দ্র করে সামাজিক অবক্ষয় আরও বাড়বে।” স্থানীয় শিক্ষার্থী আবু সাইদ বলেন, “আমরা এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। মেলাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই লোকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।
আমরা প্রশাসনকে বলবো এবার মেলার নামে যেনো এসব অপসংস্কৃতি করে আমাদের পড়ানোশার ক্ষতি না করা হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, পূর্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় এই মাদক ব্যবসা ও অনিয়ম চলত। দুরমুঠ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান জুবেরীর নাম উল্লেখ করে এলাকাবাসী জানান, তার প্রভাব থাকায় কেউ এসবের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করত না। তবে সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাধারণ মানুষ প্রতিবাদী হতে শুরু করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রনেতা বলেন,এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মেলা শুরু হবে। মেলা শুরুর আগেই বেশধারী পাগলরা এসে জড়ো হতে শুরু করেছে । আস্তানায় প্রকাশ্যে মাদকসেবন ও বিক্রি হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
এই ইউনিয়নের দায়িত্বরত বিট পুলিশের কর্মকর্তা যিনি রয়েছেন তিনি দায় এড়াতে পারেনা। তার বিট এলাকায় মাদক বিক্রি ও সেবন চললেও তিনি কোন খোঁজ রাখেননি। এ বিষয়ে দুরমুট ইউনিয়ন বিট পুলিশের কর্মকর্তা ও মেলান্দহ থানার উপ-পরিদর্শক তারিকুল ইসলাম হিমনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি। তবে মেলান্দহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, মাদক সেবন ও বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। আমরা মেলার সার্বিক পরিস্থিতির উপর কঠোর নজর রাখছি।
আগামী ১৩ এপ্রিল মেলা মাঠসংলগ্ন স্থানে সর্বস্তরের সুধীজনদের নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হবে, সেখানে পুলিশ সুপার মহোদয় উপস্থিত থাকবেন। মেলা কমিটি যদি সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারে, তবে মেলার অনুমতি দেওয়া হবে না। প্রশাসনের অবস্থান খুবই স্পষ্ট—অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়দের দাবি, ঐতিহ্যবাহী এই মেলাকে ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। অন্যথায় এই মেলা ভবিষ্যতে সামাজিক ব্যাধির উৎসস্থলে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা তাদের।