নাগরিক ভাবনা,আ্যাড. এম এ মজিদ: ঘটনাটি ঘটেছিল আমারই চোখের সমানে আজ সকালে। আমার পাশের বাড়ির একজন বেশ কয়েক ডজন কবিতর পালেন। বিশ্বের কয়েকটি প্রভুভক্ত প্রানির মধ্যে কবুতরও খুবই প্রভুভক্ত পাখি হিসেবে সর্বজন বিদিত।
আমার বাসার সমনে কবুতরের প্রভু যখন আয় আয় বলে ডাক দেন তখনি কবুতরগুলো তার কাছে চলে আসে। তাদেরকে চাল গম খুদ ছিটিয়ে দিলে কবুতরগুলো বাকবাকুম শব্দ করতে করতে খাবারগুলো তারা নির্ভয়ে খেয়ে তাদের প্রভুকে তারা নানাভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকে। সেই সাথে হয়তো সৃষ্টিকর্তার কাছে কবুতরগুলো প্রান খুলে প্রার্থনা করতে থাকে তাদের প্রভুর উন্নতি সমৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনায়। তারা দোয়া করে তাদের প্রভুর আয় উন্নতি ও রোজগার বাড়তে থাকুক, যাতে করে তাদের প্রভু তাদেরকে আরো বেশি বেশি করে খাওয়াতে পারে।
কবুতর তাদের প্রভুকে এতটাই ভালোবাসে যা অকল্পনীয়। অনেক বাড়িতে আগুন লেগে গেলে কবুতরগুলো প্রান বাঁচাতে পালিয়ে না গিয়ে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুনে পুড়ে জীবন উৎসর্গ করে কিন্তু প্রভুর সাথে বেইমানি করে না।
আজ সকালে আমার প্রতিবেশিকে দেখলাম, তিনি খাবার ছিটিয়ে কবুতরগুলোকে আয় আয় বলে ডাকার পর কবুতরগুলো তার কাছেই চলে এলো। ১৫/১৬টি কবুতরের মধ্যে খুব সহজেই দু’টি কবুতরকে তাদের প্রভু ধরে ফললেন। কবুতরগুলো ভেবেছিল, তার প্রভু তাদেরকে আদর করে আবার উড়িয়ে দিবে। কিন্তু তার প্রভু তা করলেন না। একটা কবুতর তার তিন বছরের ছেলেকে ধরতে দিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি কবুতরকে জবহ্ করলেন। এ দৃশ্য দেখে তাদর শিশু সন্তানটি খুশিতে অনেকটাই আত্মহারা হওয়ার মতো। কেননা, আজ তারা মজা করে কবুতরের মাংশ দিয়ে সকালের খাবার খাবে। তারা প্রতিদিনই সকালে হালকা নাস্তার পরিবর্তে ভরাপেট ভাত-তরকারি খেয়ে থাকেন। শিশুটির হাতে থাকা আর একটি কবুতর তার জুটিকে এ ধরনের মর্মান্তিক জবহ্ করার দৃশ্য দেখে তৎক্ষণাৎ কবুতরটি হার্টফেল করে মারা যায়।
কবুতরটি নিথর হয়ে পড়লে শিশুটি বলতে থাকে, “বাবা বাবা মনে হইতাছে কইতরটা মইরা গ্যাছে”। তার পিতা শিশুটির কাছ থেকে কবুতরটা তার হাতে নিয়ে ঝাকি দিয়ে এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া করে তারা নিশ্চিত হলেন যে, কবুতরটি সত্যি সত্যিই মারা গেছে। কবুতরটা কেন মারা গেল এটা নিয়ে তারা অনেক কথাবার্তা বলাবলি করে তারা এই মর্মে উপনীত হলেন যে, কবুতরটি রোগাক্রান্ত থাকার কারণেই মারা গেছে। কিন্তু কবুতরটি মোটেও অসুস্থ্য বা রোগাক্রান্ত ছিল না, তার জুটির নির্মম হত্যাকান্ডটি দেখেই তার জুটি কবুতরটি হার্টফেল করে মারা গেছে, এতে কিন্তু বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই।
দেখেশুনে মরা কবুতর খাওয়া যাবে না ভেবে মৃত কবুতরটি জবহ্ না করে ফেলে দিল। তাদের বাসায় সদস্য সংখ্যা ৫ জন। একটা কবুতরে তাদের সবার হবে না ভেবে আর একটি কবুতর ধরার জন্য প্রভু কিছু খুদ ছিটিয়ে দিয়ে আয় আয় বলে অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করতে থাকলেন, কিন্তু একটিও কবুতর আর খাদ্যকনা খেতে নিচে নামলো না।
সমস্ত ঘটনাটি আমার চোখের সামনেই ঘটেছিল। জুটিকে জবহের দৃষ্টি দেখে তার জুটির কষ্টের কারনেই হার্টফেল হয়ে মৃত্যুটা দেখলাম। আরো দেখলাম, আরো একটা কবুতরকে ধরার জন্য খাওয়া ছিটিয়ে দিয়ে প্রভু অনেক ডাকাডাকি করা সত্বেও একটিও কবুতর নিচে নেমে এলো না।
বিষয়টি কে কিভাবে গ্রহন করবেন আমি জানি না। কিন্তু সমস্ত ঘটনাটি আমি স্বচক্ষে দেখেছি। সমগোত্রীয় জুটির জবহ্ করার দৃশ্য, তার জুটির হার্টফেল করে মরে যাওয়ার দৃশ্য এবং অন্যান্য সমগোত্রীয় কবুতরগুলো প্রভুর ডাকে সাড়া না দিয়ে খেতে না আসার দৃশ্য আমি দেখলাম, ভাবলাম, বুঝলাম এবং উপলব্ধি করলাম, যা প্রকাশ করে অন্য কাউকে বলার মতো বিষয় নয়।
এটাই বিধাতার বেঁধে দেওয়া নিয়ম। কবুতরগুলো কয়েকদিন পর তাদের সমগোত্রীয় বন্ধুর জবহ্ করার দৃশ্য ভুলে যাবে। তাদের প্রভু খাওয়া দিতে থাকবে। কবুতরগুলোও খেতে নামবে। আবার একদিন তাদের কয়েকটিকে ধরে ফেলে জবহ্ করে নিজেরা ভক্ষণ করে তৃপ্তি লাভ করবে অথবা বিক্রি করে কিছু অর্থ কামাবে। এটাই মহাবিশ্বের চলমান রীতি ও নীতি। এভাবেই চলতে থাকবে মহাবিশ্বের সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই।