মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা নির্বাচন চাই, কিন্তু তা হাসিনার অধীনে নয়। এ জন্য সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আজ শনিবার বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নাকি ভালো নির্বাচন হয়। কদিন আগে বরিশালে সিটি নির্বাচনে চরমোনাইর দলের প্রার্থীকে আঘাত করে তা প্রমাণ দেখিয়েছে। দেশে এমনই নির্বাচন কমিশন যে প্রার্থী না মরলে তাদের হয় না। এদের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। বিদেশিরাও বলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে তা মানা হবে না। এ জন্য র্যাবকে তারা স্যাংশন দিয়েছে।
সমাবেশে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মীদের ঢল নামে। ব্যতিক্রমধর্মী নানা আয়োজন ছিল এই সমাবেশে। বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে বিদায় করার জন্যই রোদ-বৃষ্টিতে আপনারা ভিজছেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে নতুন একটা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আজ থেকে ১১ বছর আগে এক মায়ের ২ ছেলে গুম হয়ে গেছে। এরকম ৭০০ এর উপরে গুম হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার মায়েদের সন্তান হারা, স্ত্রীদের স্বামী হারা করিয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই সরকার ১৪ বছর ধরে জনগণের ওপর চেপে বসে আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এই সরকার বৈধ নয়। একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের দাবি ছিল। ৪টি নির্বাচন হলো তত্ত্বাবধায়কে, সবাই মেনেও নিল। কিন্তু তারা এসে নিজেদের অধীনে নির্বাচন দিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
তারুণ্যের সমাবেশের প্রধান বক্তা যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, আমরা ৪ কোটি ৭০ লাখ তরুণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ক্ষমতা নয়, ভোটের জন্য লড়াই করছি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যাকারী দল। তারা দিনের ভোট রাতে করে। এ সরকারের পতনে রাজপথে ফয়সালা হবে।
সমাবেশের বিশেষ বক্তা স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানি বলেন, ‘ঘরে ঘরে চাকরি, বিনা মূল্যে সার দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়েছে এই সরকার। তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত পথে ধাবিত হতে হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকসি জাহান শিরিন, মহানগর বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, মাসুদ হাসান মামুন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তছলিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জনি, ছাত্রদলের নগর সভাপতি রেজাউল ইসলাম রনি প্রমুখ।
এর আগে দুপুরের আগ থেকে বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল আসতে শুরু হয়। বিশেষ করে নদীপথে শত শত নেতাকর্মী সমাবেশ স্থলে আসেন। বিএনপির এই সমাবেশ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন স্পটে পুলিশি নিরাপত্তা এবং সাঁজোয়া যান দেখা গেছে। যা বললেন গুম, খুনের শিকার ব্যক্তির স্বজনেরা
সমাবেশে ভোলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত আব্দুর রহমের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। তরুণেরা আপনারা আমার স্বামীর রক্তের বদলা নেবেন।’ গুম হওয়া ফিরোজ খান কালু ও মিরাজ খানের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘সরকার গুম খুনের উন্নয়ন করেছে। মায়ের চোখের পানিতে সরকারের পতন হবেই।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হয়রানির শিকার সাংবাদিক মামুনর রশিদ নোমানী বলেন, ‘বরিশালের সেই মামাত ভাই গডফাদার ২০২০ সালে আমার ওপর হামলা চালিয়েছিল।’ চাকরি বঞ্চিত জাহিদুল ইসলাম রাতুল বলেন, ‘আমি বার বার ভাইবা দিয়েও চাকরি বঞ্চিত। একটি দলের মতাদর্শ না হওয়ায় চাকরি পাচ্ছে না দেশের হাজার হাজার যুবক।’
চাকরিচ্যুত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ রুপন বলেন, ‘তাদের ৮৫ জনকে বরখাস্ত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।