মুক্ত কলম আন্তজার্তিক নিউজ ডেক্সঃ আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভাঙচুর, নামিয়ে ফেলা হয়েছে জাতীয় পতাকা, ভারতের দুঃখ প্রকাশ আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভাঙচুর, নামিয়ে ফেলা হয়েছে জাতীয় পতাকা। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সার্বক্ষণিক সব খবর পেতে যুক্ত থাকুন আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকা আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকা। সোমবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, সোমবার আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে নির্দেশ করে যে, বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পেরেছে। এ সময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুঃখের বিষয়, হাইকমিশন প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি।
সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক মিশনের ওপর এই জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অসম্মান একটি প্যাটার্নের সাথে মেলে, গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় একই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছিল। আগরতলায় কূটনৈতিক মিশনের ওপর এমন হামলা ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬১ লঙ্ঘন হয়েছে।”
কূটনৈতিক মিশনগুলোতে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সেই দেশের সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত সরকারকে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া এবং ঘটনার বিস্তৃত তদন্ত এবং ভারতে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও অকূটনীতিক সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কূটনৈতিক মিশনে যেকোনো সহিংসতা প্রতিরোধ করতে আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ। বিক্ষোভের সময় আগরতলায় বাংলাদশ সহকারী হাই কমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনাও ঘটে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছে তবে তা একই পতাকা কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কলকাতা থেকে বিবিসি সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানান, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে।
সভা শেষে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে। এসময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে- ঘটনাস্থল থেকে এমন কিছু ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে তারা। এই বিষয়ে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি কার্যকরী সদস্য বিকে রয় জানিয়েছেন, ডেপুটেশন দেওয়ার সময় বাইরে কী ঘটনা ঘটেছে তা তারা দেখেননি এবং তারা ডেপুটেশন দিয়ে আসার পরও কাউকে অফিসের ভিতরে দেখতে পাননি।
ঘটনার খবর পেয়ে ত্রিপুরা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের অফিসটি ঘুরে দেখেন এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তবে এ বিষয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করেনি। এদিকে, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই কূটনৈতিক সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা উচিত নয়।
এদিকে, বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের কোচবিহারেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনী হিন্দু মঞ্চ। সংগঠনটির সদস্যরা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চ্যাংড়াবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিলও করে। এই কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ছিল সীমান্ত এলাকায়। এদিকে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের পেট্টাপোল সীমান্তেও। সেখানে সমাবেশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে। সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এটি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ দেয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্য খুব সুষ্ঠু পদক্ষেপ না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টাঃ বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেন্দ্র করে শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে মন্তব্য করেছেন তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘তার অবস্থানের জন্য সহায়ক হবে না’ বলে মতপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্যকে আমরা মমতা ব্যানার্জী ধরনের মন্তব্য হিসাবেই দেখতে চাই, কারণ উনি এই বক্তব্য কেন দিলেন, এটা আমি বুঝতে পারছি না। কলকাতায় আমি দীর্ঘদিন ছিলাম, তার সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা তার জন্য খুব সুষ্ঠু পদক্ষেপ না, রাজনৈতিকভাবে। রাজনৈতিক বিতর্ক সবসময় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা উচিত। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তার অবস্থানের জন্য সহায়ক হবে না। এটা অবশ্য আমার মত।”
ভারতের সাথে আগামী দিনগুলোতে সম্পর্ক তাহলে কেমন হতে যাচ্ছে, এই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, পাঁচ তারিখের পর থেকে আগের সম্পর্ক আর পরের সম্পর্ক এক না। সম্পর্কে যে সমস্যা আছে, সেটা আমরা স্বীকার করি। একটা সমস্যা স্বীকার করলে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যায়। আমরা ভারতের সাথে একটা স্বাভাবিক ভালো সুসম্পর্ক চাই, পরস্পরের স্বার্থ ঠিক রেখে। তিনি বলেন, ”আসলে পাঁচ তারিখের আগের আর পরের সরকারের সাথে কিছু তফাৎ আছে। সেটার সাথে অ্যাডজাস্ট করতে কেউ কিছু সময় নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে, বাস্তবতা মেনে নিয়েই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে।
সোমবার বিকেলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এরপর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় এসব মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকভাবে খারাপ অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে – এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে রয়েছে। সেই প্রচেষ্টা যেন সফল না হয় সে প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি বলে কূটনীতিকদের জানিয়েছি। প্রধানত ভারতের মিডিয়া এই ধরনের ধারণা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে এবং আরো কিছু দেশের মিডিয়া ভারতের মিডিয়ার বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে একই ধরনের খবর প্রকাশ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কোন পরিস্থিতিতে গ্রেফতার করা হয়েছে ও তার জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে, সেই বিষয়টিও কূটনীতিকদের বিস্তারিত জানিয়েছেন বলে জানান মি. হোসেন। ‘আমার মনে হয়, আমাদের যে অবস্থান, সেটা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। এটা অবশ্যই তারা তাদের দেশে রিপোর্ট করবেন, যেটা নিয়ম,” তিনি বলেন। কূটনীতিকদের কিছু কিছু বিষয়ে প্রশ্ন ছিল, সেগুলোর উত্তর দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এসব আলোচনায় তারা ‘কনভিন্সড’ বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও কূটনীতিকদের বার্তা দিয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ”আমরা এই বার্তা দিতে চাই যে, এই সরকার কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বরদাস্ত করবে না। সেটা হিন্দু বা মুসলিম বলে কথা না, সবাইকে আমরা সমান চোখে দেখবো, সেই বার্তাই আমরা সবাইকে দিতে চেয়েছি। আইন তার নিজের মতো চলবে, সেখানে কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে অবশ্যই শক্ত হাতে দমন করা হবে।